ফিলিস্তিনে ২০ বছরে সবচেয়ে বড় ইসরাইলি অভিযান

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনের জেনিন শরণার্থী শিবিরে বড় আকারের সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

সোমবার (০৩ জুলাই) জেনিন শরণার্থী ক্যাম্পে বিমান হামলার পাশাপাশি ড্রোন হামলাও চালিয়েছে ইসরাইল। এছাড়া কয়েকশ ইসরাইলি সেনা সাঁজোয়া যান ও বুলডোজার নিয়ে পশ্চিম তীরে অভিযান চালায় ইসরাইলি বাহিনী। যা গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইসরাইলি অভিযান। খবর ‘আল জাজিরা’ ও বিবিসি’র।

এর আগে ২০০২ সালের এপ্রিলে ইসরাইলি বাহিনী এখানে এক পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান চালায় যাতে কমপক্ষে ৫২ জন ফিলিস্তিনি এবং ২৩ জন ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়।

প্রায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনির বাসস্থান এই জেনিন ক্যাম্পটির ওপর ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এরপর হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে, যার ফলে এখন রাস্তায় রাস্তায় বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে।

জেনিনের মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী এবং গবেষক মোহাম্মদ কামানজি বলেন, জেনিন শহর এবং শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে গেছে। ইসরাইলি বাহিনী এখানে একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোরও রয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, অর্ধশতাধিক মানুষ এসব হামলায় আহত হয়েছেন।

Nagad

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা জেনিন এলাকায় ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামোর’ ওপর আঘাত হানছে এবং ২০ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ শেতায়েহ বলেছেন, ইসরাইল ক্যাম্পটি ধ্বংস করে এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অভিযান শুরু করার পর এখন পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আট ব্যক্তি নিহত হয়েছে এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।

জেনিনের বৃহৎ শরণার্থী শিবির থেকে বিবিসি’র ইয়োলান্দে নেল জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় আক্রমণগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি জানান, নিয়মিত বিরতিতে জোরালো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আরো শোনা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ও উড়ন্ত ড্রোনের আওয়াজ।

প্রায় ৪০ হাজার লোকের শহর জেনিনে আগেই একটি হরতাল ডাকা হয়েছিল, সেকারণে রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। ক্যাম্প এলাকার আকাশে বড় বড় ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে।

একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক আল আহমদ বার্তা সংস্থা রয়টার্স’কে বলেন, পরিস্থিতি এখন আসল যুদ্ধক্ষেত্রের মত মনে হচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্সগুলো আহত লোকে ভর্তি হয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে। লড়াইয়ের কারণে জেনিন শিবিরটি বন্ধ করে দেওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সগুলোও সেখানে ঢুকতে হিমশিম খাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার (৩ জুলাই) ভোরে জেনিন শহরে কমপক্ষে ১০ বার বিমান হামলা চালানো হয়। সেখানকার ভবনগুলো থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ইসরাইলের সাঁজোয়া যানের একটি বহর শহরের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।

জেনিন শহরে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে হামলাকে নতুন আগ্রাসন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ক্রমাগত ইসরাইলি উত্থানের কারণে শান্তির সম্ভাবনা এবং সহিংসতা বৃদ্ধির সম্পর্কে সতর্ক করেছে কাতার।

এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের সুরুক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে তাগিদ দিয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রটি। একই সাথে ইসরাইলকে দমন-পীড়ন বন্ধ করে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছে কাতার।

সারাদিন/০৪ জুলাই/এমবি