ভারী হয়ে উঠেছে ভান্ডারিয়ার বাতাস

পিরোজপুর সংবাদদাতাপিরোজপুর সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৪:০৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে পুকুরে পড়ে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরও ৩০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আটজনের বাড়িই পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়।

ইতোমধ্যেই ঝালকাঠি থেকে নিহতদের লাশ ভান্ডারিয়া উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একই দিনে একই এলাকায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এতগুলো মানুষ নিহত হওয়ায় বাড়িতে বাড়িতে স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, শনিবার (২২ জুলাই) সকাল ৯টায় প্রায় ৬৫-৭০ জন যাত্রী নিয়ে বাশার স্মৃতি পরিবহন নামে একটি বাস বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গিয়ে ঝালকাঠির সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পুকুরে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই ১৩ জন যাত্রী নিহত হন এবং কমপক্ষে ৩০ যাত্রী আহত হন। আহতদের ঝালকাঠী সদর হাসাপাতাল ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভার্তি করা হলে সেখানে আরও চারজন যাত্রী মারা যান।

নিহতদের মধ্যে আটজনের বাড়ি ভান্ডারিয়া উপজেলায়। ওই আটজন হলেন- দক্ষিণ ভান্ডারিয়ার পান্না বেপারীর ছেলে তারেক বেপারী (৪২), উত্তর পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের পিতা ও পুত্র ছালাম মোল্লা (৬৫) ও তার ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), পশারী বুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া (৬), পূর্ব ধাওয়া এলাকার রহিমা বেগম (৭০) এবং আবুল কালাম হাওলাদার (৫০), উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭৫) এবং তেলিখালী গ্রামের রাসেল সিকদারের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৪)।

নিহত ৬ বছরের শিশু সুমাইয়ার মা পিয়ারা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা জন্য বরিশাল যাচ্ছিলাম। পথে বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে মেয়েটি মারা যায়। আমি কোনোরকমে জানালা থেকে মাথা বের করে মেয়েটির হাতের কাছে পেয়ে তাকে নিয়ে বের হই। ততক্ষণে দেখি সে আর নাই।

পূর্ব ধাওয়া গ্রামের মো: হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, পশাবুনিয়া জামে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম হাওলাদার তার মা রহিমা বেগমকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় দুইজনেই মারা গেছেন। আবুল কালামই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

Nagad

ভান্ডারিয়া বাজারের নিহত ওষুধ ব্যবসায়ী তারেক বেপারীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে তার স্ত্রী কেয়া অচেতন হয়ে পড়ে আছে। তার শ্বশুর কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শিশু পুত্র মাহাদিকে (৭) নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিল তারেক। শিশুটি বেঁচে গেলেও তার বাবা ঘটনাস্থলে মারা যান।

নিহত ছালাম মোল্লার ছোট ছেলে রাসেল মোল্লা গণমাধ্যমকে জানান, সে তার বাবা ও বড় ভাইয়ের সাথে বাবার চিকিৎসার জন্য বরিশালে যাচ্ছিলেন। চালকের পেছনের ছিটেই বসা ছিল সে। বাস ছাড়ার পর থেকে বাসের চালক বাড়তি যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসের সুপারভাইজারের সাথে কথা বলছিল। চালক অমনযোগী ছিল। গাড়ীটি ছত্রকান্দা বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পরই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে উল্টে গিয়ে যায়। এতে বেশিরভাগ যাত্রী পানিতে ডুবে মারা যায়। আল্লাহর রহমতে আমি বাসের জানালা থেকে বের হয়ে বেঁচে যাই। কিন্তু ঘটনাস্থলে আমার বাবা ও বড় ভাই ট্রাক ড্রাইভার শাহীন ঘটনাস্থলে নিহত হন।

নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের স্বজনদের আহাজারীতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মাহিনুর বেগম ও অন্তসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা আক্তার বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত ১৭ জন মারা গেছে। সকলের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি ভান্ডারিয়ায়। এছাড়া রাজাপুরের দুইজন এবং কাঠালিয়ার একজন, বাকেরগঞ্জের একজন, মেহেন্দি গঞ্জের দুইজন, মঠবাড়িয়ার একজন।

সারাদিন/২৩ জুলাই/এমবি