মার্কিন নির্বাচনে ফল উল্টে দেবার চেষ্টায় অভিযুক্ত ট্রাম্প

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে – যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা, ষড়যন্ত্র করা, সাক্ষ্য জাল করা এবং নাগরিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি যে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল, সেটি তদন্ত করতে গিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়। ৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্প, পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তাকে ইতিমধ্যে আরও দুটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে: সংবেদনশীল নথিপত্র ব্যবস্থাপনায় গাফলতি করা এবং ব্যবসায়িক তথ্য জাল করার কথা গোপন রাখার জন্য একজন পর্ন তারকাকে তার মুখ বন্ধ রাখার শর্তে ঘুষ দেয়া ।

নির্বাচনী তদন্তে ট্রাম্পের পরাজয় এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে দাঙ্গার ঘটনা মিলিয়ে তার দুই মাসের কার্যকলাপ নজারদারি করা হয়। ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেসে ট্রাম্পের সমর্থকরা হামলা চালিয়েছিল কারণ আইন প্রণেতারা ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিজয়কে সমর্থন জানিয়েছিল।

তদন্তে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি, মার্কিন বিচার বিভাগে নিযুক্ত বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) সন্ধ্যায় বলেন, “আমাদের দেশের রাজধানীতে ৬ জানুয়ারী, ২০২১ সালের হামলার ঘটনা ছিল আমেরিকান গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব আক্রমণ। “অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই দাঙ্গার ইন্ধন দেওয়া হয়েছিল।”

জ্যাক স্মিথ ‘দ্রুত বিচার’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সংক্ষিপ্ত বিবৃতিটি গুটিয়ে ফেলেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে সাবেক প্রেসিডেন্ট “দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ বলে ধরে নিতে হবে”। ট্রাম্পকে বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) ওয়াশিংটন ডিসির আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।

Nagad

৪৫ পৃষ্ঠার অভিযোগে ছয়জন অজ্ঞাতনামাসহ চার আইনজীবী, একজন বিচার বিভাগের কর্মকর্তা এবং একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রকারীর তালিকায় রয়েছেন।

আদালতের নথিতে ট্রাম্পকে “অসততা, জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার, বাধা দেওয়ার এবং পরাজিত করার ষড়যন্ত্র” বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটার জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে আইন-প্রণেতারা বলেন, “এই দাবিগুলি মিথ্যা ছিল এবং আসামী জানত যে সেগুলি মিথ্যা।” তারা আরও বলেন যে ট্রাম্প ৬ জানুয়ারী জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রাপ্য প্রশংসাপত্র রোধ করার জন্য ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন।

“সহিংসতার কারণে, আসামী এবং অন্য ষড়যন্ত্রকারীদের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা বেড়ে যায়। এবং সেই দাবিগুলির উপর ভিত্তি করে বাইডেনকে প্রশংসাপত্র দিতে আরও দেরী করার জন্য কংগ্রেসের সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।”

অভিযোগপত্রে অসংখ্য মার্কিন কর্মকর্তা এবং ট্রাম্পের প্রচারণায় অংশ নেয়া ঊর্ধ্বতন কর্মীদের তালিকাও রয়েছে, যারা বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছিলেন যে তিনি হেরে গেছেন এবং ভোটার জালিয়াতির কোনও প্রমাণ নেই।

ট্রাম্প, যিনি এখন তিনটি ভিন্ন মামলায় সব মিলিয়ে ৭৪টি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন, বর্তমানে রিপাবলিকান দলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি।

যিনি জিতবেন তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থীর সাথে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামবেন। সেই ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী প্রেসিডেন্ট বাইডেন হতে পারে। ট্রাম্পের প্রচারণা দল এক বিবৃতিতে বলেছে যে, মঙ্গলবারের অভিযোগটি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সমান।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের ওপর এই নিপীড়ন ও অনাচার ১৯৩০ এর দশকে নাৎসি জার্মানি, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়,” প্রচারাভিযানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তারা আরও জানায়, “এই অ-আমেরিকান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।”

সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী রুডি গিলিয়ানি সহ-তদন্তের অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও উপদেষ্টার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

জর্জিয়া রাজ্যের আইনপ্রণেতারাও একই অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন, তিনি বাইডেনের বিজয় বাতিল করার জন্য বেআইনিভাবে কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েছিলেন কিনা সেদিকে নজর দেয়া হয়েছে।

ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হবে কি-না সে বিষয়ে আটলান্টার আইনপ্রণেতাদের সিদ্ধান্ত এই মাসে পাওয়ার আশা রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হচ্ছে। বাইডেন যেন অফিস নিতে না পারেন সেজন্য ট্রাম্পকে তারা সহযোগিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার মিশিগানের রাষ্ট্রীয় কৌসুলিরা একজন প্রাক্তন রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেল প্রার্থী এবং আরেকজন ট্রাম্প সমর্থকের বিরুদ্ধে ভোটিং মেশিনে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন। মি ট্রাম্প যে ব্যাপক ভোটার জালিয়াতির কারণে হেরে গেছেন, তারা সেটাই করতে চেয়েছিলেন।

দাঙ্গার ঘটনা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ মি. ট্রাম্পকে দ্বিতীয় অভিশংসনের দিকে ঠেলে দিয়েছে- ট্রাম্প প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যিনি দুবার অভিশংসনের মুখে পড়লেন। তথ্য সূত্র- বিবিসি

সারাদিন/০২ আগস্ট/এমবি