ঢাবিতে অভিযানেও মিলছে না ডেঙ্গুর সমাধান!

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৬, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

সারাদেশে প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সে তালিকায় আছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নামও। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় কয়েকজনকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানোর খবরও পাওয়া গেছে।

ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে যেখানে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার কথা, সেখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নীরব ভূমিকা পালন করছে ঢাবি প্রশাসন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হলগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে ক্যাম্পাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন একের পর এক অভিযান চালিয়ে এডিস মশার উৎপাদনস্থল ধ্বংস করছে। তবুও প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে রোগীর লাইন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে বারবার বলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানিতে এ মশার লার্ভা দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হল, হলের মাঠ, একাডেমিক ভবন ও ভবন সংলগ্ন মাঠের প্রাঙ্গণে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, তদারকির অভাবে এসব জায়গায় থাকা পুরনো পানির বোতল, ডাবের খোসা ইত্যাদিতে পানি জমা রয়েছে। এছাড়া মল চত্বরে শতবর্ষের স্মৃতিস্তম্ভসহ ক্যাম্পাসের যেসব জায়গায় উন্নয়ন কাজ চলছে, সেসব জায়গায় পানি জমে থাকার পরিমাণ বেশি। এসব জায়গায় জন্ম নিচ্ছে লাখ লাখ এডিস মশা।

শুক্রবার (০৪ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় মশা জন্মানোর উপকরণ বিশেষ করে স্যার এ এফ রহমান হল সংলগ্ন মুহসীন হলের মাঠ, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাঙ্গণ, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন এলাকা, প্রক্টর অফিসের পেছনে, সূর্যসেন হল ক্যাফেটেরিয়ার পাশে অবস্থিত শিক্ষক কোয়ার্টারের সামনে আবর্জনা ও আগাছায় ভরপুর। সমাজবিজ্ঞান চত্বরের ফোয়ারার পানি দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না। হাকিম চত্বরেও সামান্য বৃষ্টিতে জমছে পানি। এসব জায়গায় দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে থাকার কারণে স্যাঁতসেঁতে হয়ে জন্মাচ্ছে লার্ভা।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর বর্ষাকাল আসার আগেই মশা নিধনে ঢাবি কর্তৃপক্ষ বিশেষ উদ্যোগ নিলেও এবার এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। তবে হলের ভেতরে মাঝে মাঝে মশা মারতে ফগিং করা হচ্ছে। মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Nagad

ঢাবি শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি করপোরেশনের ধারাবাহিক অভিযান চলে। আমার মতে এটার কার্যকারিতা এখন কমে গেছে। এডিস মশা এই কেমিক্যালের বিরুদ্ধে সারভাইভ করতে শিখে গেছে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনকে ভিন্ন পন্থা উপায়ের পরামর্শ এই শিক্ষার্থীর।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিকেল সেন্টারে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও, এখানে পরিপূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত শয্যা নেই, এছাড়া ডেঙ্গু রোগীর জন্য সরঞ্জাম না থাকায় এ রোগে আক্রান্তদের সাধারণত মেডিকেলে ভর্তি নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতেও এখানে ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল সেন্টারের এক চিকিৎসক বলেন, আমাদের এখানে জ্বর ও ডেঙ্গুর রোগী বেড়েছে। এখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্লাটিলেট পরীক্ষা করা যায়। শিক্ষার্থীদের এর বাইরে প্রয়োজন হলে অন্য জায়গায় করতে হয়। শয্যা কম থাকায় আমরা ডেঙ্গু রোগীকে সাধারণত ভর্তি নিচ্ছি না। এছাড়া ডেঙ্গু রোগীর জন্য যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, সে ব্যবস্থাও আমাদের এখানে পরিপূর্ণভাবে নেই।

মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার হাফেজা জামান বলেন, আমাদের মেডিকেলে অনেক জ্বরের রোগী আসছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ডেঙ্গু আক্রান্ত। সাধারণ ডেঙ্গুর চিকিৎসা আমরা এখানে দিই, আশঙ্কাজনক হলে রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় এলাকা। কেউ বাইরে থেকে ময়লা এনে ফেললে বোঝা যায়। না। কিন্তু আমরা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, হল প্রতিনিয়ত মনিটরিং ও পরিষ্কার করি। সূত্র- ঢাকা মেইল

সারাদিন/০৬ আগস্ট/এমবি