ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত দুঃখজনক: কৃষিমন্ত্রী

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:১৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২৩

প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সুযোগ দেয়া উচিত বলেও মনে করেন মন্ত্রী।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারত কোনো ধরনের প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের উচিত সুযোগ দেয়া। তাদের এই সিদ্ধান্তের ফলে পেঁয়াজের বাজার কীভাবে সামলাবো সেটা মোকাবিলা করাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়।

সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।

ভারত তাদের রফতানি পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ ট্যাক্স বাড়িয়েছে শুনেই দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে ফেলেছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

সম্প্রতি ভারত সফর করে আসা ক্ষমতাসীন দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ভারত পেঁয়াজে রফতানি শুল্ক বাড়ানোর কারণে বাংলাদেশেকে অনেক ভুগতে হয়। সম্প্রতি ভারত সফরে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীকে এমনটা না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তারা গমের ক্ষেত্রে আর এমন করবে না বলে আশ্বস্ত করেছিল। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা করবে কি না জানি না।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ কী এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মশলা জাতীয় ফসল। পেঁয়াজের এত ব্যাপক ব্যবহার হয় যা অনেকটা সবজির মতো। পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই উপযোগী। তবে আমাদের আগে যেসব পেঁয়াজ ছিল সেগুলোর উৎপাদনশীলতা কম। এরইমধ্যে আমাদের কৃষি গবেষকরা উন্নতজাতের পেঁয়াজ উদ্ভাবন করেছেন। সেগুলোর ফলন অনেক বেশি। প্রতি হেক্টরে ২০ টন পেঁয়াজ হয়।

Nagad

তিনি বলেন, আমাদের পেঁয়াজের মূল মৌসুম হলো মার্চের শেষে ও এপ্রিলের প্রথম দিকে। সে সময় দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, এটা হলো আমাদের সমস্যা। পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল তাই বেশি ঘরে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যদি পেঁয়াজ ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে পারতাম তাহলে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সমস্যা হতো না। বড় সমস্যা হচ্ছে পেঁয়াজ গুদামে রাখা যায় না। সেজন্য আমাদের প্রায় প্রতিবছর পেঁয়াজ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের দাম হঠাৎ কোনো বছর কমে যায়। গত বছর দাম কম ছিল। ফলে চাষিরা এ বছর আবাদ করতে পারেনি। এজন্য এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। আমরা প্রথম দিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিইনি। এতে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছে। এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে আমদানি না করলে দেশি পেঁয়াজ কমে যাচ্ছে এবং দাম আস্তে আস্তে বাড়ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপিও দিয়েছি। কিন্তু এসেছে মাত্র ৩ লাখ টন।

কেউ কি এখন পর্যন্ত এসেছে আইপির জন্য- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। কারণ তাদের হাতে তো আইপি আছে। সেটাই আনে না। দাম বাড়বে, তবে আকাশচুম্বী হবে না বলে ধারণা করছি।

সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা কি দুর্বল- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মনিটরিং দুর্বল নয়। আসলে এটি মুক্তবাজার অর্থনীতি। সেখানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়? কাজেই ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আসলে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম এমনিতেই কমবে। এটাই হলো মূল কথা।

প্রসঙ্গত, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল থাকবে। গত শনিবার (১৯ আগস্ট) ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণের একটি ব্যবস্থা হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।