তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট চীন বিরোধী লাই, ক্ষিপ্ত চীন

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪

তাইওয়ানে সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্বায়ত্বশাসিত এই ভূখণ্ডটির নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন উইলিয়াম লাই, যা একই সঙ্গে অস্বস্তিতে ফেলেছে এবং ক্ষুব্ধ করেছে বেইজিংকে। কারণ, উইলিয়াম লাইয়ের নির্বাচিত হওয়ার অর্থ— চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে তাইওয়ানের আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।

তাইওয়ানের বৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) এবং কুওমিনটাং। দু’টি রাজনৈতিক দলই তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, তবে ডিপিপি বেইজিংয়ের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার পক্ষে নয়। অপরদিকে কুওমিনটাং বরাবরই বেইজিংয়ের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়।

উইলিয়াম লাই নিজেও চীনবিরোধী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। শনিবারের নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে নিজের প্রধান প্রতিপক্ষ কুওমিনটাংয়ের প্রার্থী হোন-ইউ ইহকে পরাজিত করেছেন তিনি।

নির্বাচনে জয়ের পর তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে উইলিয়াম লাই বলেন, ‘দেশ বর্তমানে সঠিক পথে রয়েছে এবং অনাগত সামনের দিনগুলোতেও তাই থাকবে। আমরা কখনও পেছনে ফিরে তাকাবো না।

পরে আরেক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা জিতেছি। বাইরের শক্তির কোনো প্রভাব এই নির্বাচনে আমরা পড়তে দিই নি। এই কৃতিত্ব পুরোপুরি তাইওয়ানের জনগণের। জনগণ দেখিয়েছে— তারা নিজেদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে সক্ষম।’

চীনের জন্যও অবশ্য বার্তা দিয়েছেন উইলিয়াম লাই। সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, চীনের সম্পর্ক স্থিতিশীল করা তার অন্যতম লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য পূরণে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের যেসব মতপার্থক্য ও ভিন্নতা রয়েছে, সেসব সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করতে তিনি আগ্রহী।

Nagad

তবে তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট এ ও বলেছেন যে স্বাধীনতা বা চীনের সঙ্গে একীভূত হওয়া নয়, তার চেষ্টা থাকবে এ ইস্যুতে ক্রস স্ট্রেইট স্ট্যাটাস কিউ মেনে চলা। এই স্ট্যাটাস কিউ তাইওয়ানকে চীনের হুমকি থেকে সুরক্ষা দেবে।

তাইওয়ান ইস্যুতে ব্যাপক স্পর্শকাতর চীন অবশ্য উইলিয়াম লাইয়ের ওপর মোটেই আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ বেইজিংয়ের কাছে উইলিয়াম লাই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ এবং ‘সমস্যা ‍সৃষ্টিকারী’ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত।

চীন বরাবরই তাইওয়ান ইস্যুতে ব্যাপক স্পর্শকাতর। ৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডটির সঙ্গে চীনের সম্পর্কও বেশ জটিল। একসময় চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তাইওয়ানকে গত ৭ দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। এই ইস্যুতে বেইজিং বরাবর ‘ওয়ান চায়না’ নীতিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি বলেছেন, চীনের মূল ভূখণ্ডে তাইওয়ানের অন্তর্ভুক্তি কেউ ঠেকাতে পারবে না।

তাইওয়ানের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপর চীনের তাইওয়ান বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘তাইওয়ান সবসময় চীনের অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে। এ ইস্যুতে চীন কখনও কোনো আপসে যাবে না।’

তাইওয়ানকে দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে আসছে চীন। দেশটিকে নিজেদের শাসনে আনার সব চেষ্টা চালিয়েছে বেইজিং। কিন্তু গত বছর প্রাক্তন মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পরই ক্ষেপে যায় চীন। তাইওয়ান ঘিরে মোতায়েন করে যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান। এর পর বিভিন্ন সময় তাইওয়ানের আকাশে চক্কর কেটেছে চীনা যুদ্ধবিমান। সামরিক মহড়ার সাক্ষীও থেকেছে। এই ভোটে চীন প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে ভোটে জেতার পরই তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের মুখে শোনা গিয়েছে গণতন্ত্রের কথা। সূত্র: বিবিসি