শেরপুরে হাতির আতঙ্কে কাটা হচ্ছে আধাপাকা ধান

শেরপুর প্রতিনিধি:শেরপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ২:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৪

বছরের পর বছর বন্য হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছেন শেরপুরের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষরা। বর্তমানে হাতির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তাদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তাই আধপাকা ধান ঘরে তুলতেই রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে এসব অঞ্চলের কৃষকদের। গত এক সপ্তাহ ধরে হাতির উপদ্রব আরও বেড়েছে।

এলাকাবাসী বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে হাতির উপদ্রব বেড়েছে। রাত জেগে ঢাক-ঢোল ও মশাল জ্বালিয়েও থামানো যাচ্ছে না ক্ষুধার্ত বুনো হাতির দলকে। তাই বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় আধপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন সীমান্ত এলাকার মানুষ। উপদ্রব সবচেয়ে বেশি শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি, মালাকোচা, খ্রিস্টানপাড়া, চান্দাপাড়া এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও, পানিহাটা, বুরুঙ্গা, কালাপানি এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও, বুরুঙ্গা, কালাপানি ও পানিহাটা গ্রামের ভারতের সীমান্তঘেঁষা ২৫০ একর জমিতে দুই শতাধিক কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। এসব এলাকায় ধান পাকতে আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু বাতকুচি, মৌচাক, চৌকিদারটিলা, ডালুকোনা, নাকুগাঁও ও পানিহাটা সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জঙ্গলে দুই সপ্তাহ ধরে শতাধিক বন্য হাতির দল তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান করছে।

তপ্ত রোদে হাতির দল পাহাড়ের উঁচু টিলায় থাকে। বিকেল হলেই নামতে শুরু করে লোকালয়ে। স্থানীয় কৃষকরা মশাল জ্বালিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাতির দলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে আসছেন। হাতির তাণ্ডব বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই জমি থেকে পরিবারের লোকজন ও শ্রমিক দিয়ে আধপাকা ধান কেটে নিয়ে আসছেন।

সম্প্রতি নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কাটা ধান মাথায় করে নিয়ে ধান খেতের পাশে রাখছেন। কেউবা আবার খেতের পাশের সড়কে রাখছেন। অনেক জায়গায় আবার দেখা গেছে সড়কে রাখা ধানগুলো মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে ধানের স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি ও মালাকোচা এলাকার কৃষকদের। তারাও আধপাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

খ্রিস্টানপাড়ার কৃষক করিম মিয়া বলেন, কদিন আগে এক কৃষককে হাতি মেরে ফেলেছে। ওই কৃষক ধান পাহাড়া দিতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য আগেই ধান কাটা শুরু করেছি। গত দুদিন ধরে ধান কাটতাছি।

Nagad

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে হাতি যেসব জায়গা দিয়ে যাতায়াত করত সেসব জায়গা দখল করে ধান চাষ করা হচ্ছে। ফলে হাতির জায়গায় হাতি রয়েছে। কিন্তু হাতির জায়গায় বর্তমানে মানুষের বাড়ি-ঘর ও চাষাবাদ হচ্ছে। তাই হাতি চলাচলের সময় কৃষকের ধান খেয়ে বা মুড়িয়ে নষ্ট করছে। কৃষকও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, তাই আধাপাকা ধান কাটছেন। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই উপায় গারো পাহাড়ে হাতির অভয়ারণ্য করা হোক এবং কৃষকদের এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হোক।

বন বিভাগের তথ্য মতে, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। এ পাহাড়ে ১৯ হাজার ২৭৫ একর বনভূমি রয়েছে। এসব বনভূমির সীমান্ত এলাকাজুড়ে ছুটছে বন্য হাতির দল। বাংলাদেশের বনাঞ্চল ভারতের বনাঞ্চলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সমতল হওয়ায় ভারতের গহিন অরণ্য থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে হাতির দল তাণ্ডব চালাচ্ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে ফসল।

শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, কৃষকদের লাগানো বোরো ধান ৮০% পাকলেই কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে হাতির অপছন্দের খাবার চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, হাতি যেসব স্থানে আসে, সেসব স্থানে কাঁটাযুক্ত গাছ লাগানোর।