ভোক্তারা চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করলে চালের দাম কমবে: খাদ্যমন্ত্রী

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ, মে ৯, ২০২৪

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন- ভোক্তারা চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করলে চালের দাম কমবে; পাশাপাশি চাল রপ্তানি করাও সম্ভব হবে।

তিনি বলেন- ‘গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক কেজি চালও আমদানি করতে হয়নি; বরং চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। এখন আমরা অনায়াসে ৫ থেকে ৭ লাখ টন চাল রপ্তানি করতে পারি, সে অবস্থা হয়েছে। তবে শুধু পালিশ করে যে চাল নষ্ট হচ্ছে সেটা অর্ধেক রপ্তানি করলেই হবে। উৎপাদিত প্রায় চার কোটি টনের মধ্যে তিন শতাংশ হারে ১২ লাখ টন চাল পালিশ করার কারণে অপচয় হচ্ছে। আমাদের চাল পাঁচ দফা পালিশ করে চকচকে করা হচ্ছে। দুবার পালিশ করলেও ৫ থেকে ৭ লাখ টন চাল বাড়বে। দফায় দফায় পালিশ করায় চালের মধ্যে শুধু কার্বোহাইড্রেট ছাড়া অন্য কোনো পুষ্টি থাকছে না। এতে খরচ হচ্ছে বিদ্যুৎ, শ্রমিকের মজুরি – সবকিছু মিলে প্রতি কেজিতে প্রায় চার টাকা। যে ভার ভোক্তাকে বহন করতে হচ্ছে। চালের দামে এ খরচ যুক্ত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘শুধু ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরির মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কঠিন। তাই ভোক্তা, খাদ্য সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের সবার মনের ল্যাবরেটরি পরিষ্কার করতে হবে। আমরা যতই মোবাইল ল্যাবরেটরি দিই না কেন, যারা ভোক্তা, যারা সরবরাহকারী, যারা উৎপাদনকারী তাদের মনের ল্যাবরেটরি পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে যতই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করি না কেন, আমার মনে হয় কোনো কাজ হবে না।’

খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘খাদ্যের মান বুঝতে পারার সবচেয়ে বড় উপায় হলো খাদ্য পরীক্ষা। পরীক্ষা করতে না পারলে নিরাপদ বা অনিরাপদ কি না, বুঝতে পারব না। জাতীয় পর্যায়ে দেশে ল্যাব সক্ষমতা খুবই সীমাবদ্ধ। ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে জেলা বা বিভাগে পরীক্ষা করা ছিল অকল্পনীয়। তাই আজকের দিন বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিন।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন।

Nagad

এ সময় জানানো হয়, মোবাইল ল্যাবে দুধে ডিটারজেন্ট, স্টার্চ, ইউরিয়ার উপস্থিতি, ঘি-তে বনস্পতি/হাইড্রোজিনেটেড এডিবল ফ্যাটের উপস্থিতি, হলুদের গুঁড়ায় লেড ক্রোমেটের উপস্থিতি, মরিচের গুঁড়ায় ইটের গুঁড়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা যাবে।

এই মোবাইল ল্যাবরেটরির মাধ্যমে গোলমরিচে পেঁপের বীজ মেশানো, নারিকেল তেলে ভেজাল, শাকসবজি-ফলমূলে রং দেওয়া, শাকসবজি-ফলমূলে বালাইনাশকের মাত্রা নির্ণয়, মধুতে চিনির মিশ্রণ, পাউরুটিতে ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমেটের উপস্থিতি, খাদ্যে অননুমোদিত কৃত্রিম রঙের উপস্থিতি, খাদ্যে ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতিসহ আরও অনেক পরীক্ষা স্বল্প সময়ে করা যাবে।

অনুষ্ঠানে খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল জেলার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তাদের কাছে মোবাইল ল্যাবরেটরির ভ্যানের চাবি হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে, দেশে এক অঙিনায় খাদ্য, কৃষি যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্য পর্যটন নিয়ে একসঙ্গে আটটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। সেমস-গ্লোবাল ইউএসএর আয়োজনে তিনদিনের এ আয়োজন চলবে শনিবার পর্যন্ত।

একযোগে শুরু হওয়া এসব প্রদর্শনী হচ্ছে: ৭ম ফুড বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো, ৪র্থ ফুড প্যাক এক্সপো, ৭ম এগ্রো বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো এবং ৭ম পোল্ট্রি অ্যান্ড লাইভস্টক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো, ১৫তম মেডিটেক্স বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো, ১০তম ফার্মা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো, ৮ম বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল ল্যাব এক্সপো এবং ৭ম ইন্টারন্যাশনাল হেলথ ট্যুরিজম অ্যান্ড সার্ভিসেস এক্সপো বাংলাদেশ।

কৃষি ও প্লাস্টিক শিল্প জগতের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, উন্নত প্রযুক্তি, পণ্য এবং পরিষেবা বিষয়ক এ প্রদর্শনীগুলোতে বাংলাদেশ, তুরস্ক, ভারত, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও চীনসহ ১৫টির বেশি দেশের প্রায় ১০০টি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে।

এছাড়া স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও সেবা নিয়ে স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান, দেশি-বিদেশি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সহযোগিতা বিষয়ক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের ১১২টি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে।