বিশ্ববাসীর চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রে, ট্রাম্প নাকি কমলা ?
হোয়াইট হাউসের চাবি হাতে পাওয়ার আজ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতা। ভোটের লড়াই। ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম কমলা হ্যারিস। প্রত্যাবর্তন বনাম নতুন ইতিহাস। আগামী চার বছর বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণে কে প্রভাব বিস্তার করবে সেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন আজ (৫ নভেম্বর)। শুধু রাজনীতি নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ভাগ্য অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে এ নির্বাচনের ওপর। তাইতো বিশ্ববাসীর চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
প্রতি চার বছর পরপর নভেম্বরের প্রথম সোমবারের পরের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। সে প্রথা অনুসারে আজ দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূল ভোটগ্রহণ হচ্ছে। বাংলাদেশ সময় আজ সন্ধ্যায় এই ভোটগ্রহণ শুরু হবে, বুধবার সকাল নাগাদ বেশিরভাগ অংশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। সব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর ধীরে ধীরে বুথ ফেরত জরিপের ফল পাওয়া যাবে। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সাড়ে সাত কোটির বেশি ভোটার এবার আগাম ভোট দিয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, এসব ভোটারের মধ্যে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট সমর্থক বেশি এবং কমলাই বেশি আগাম ভোট পেয়েছেন।
নিজের জলপাই মাড়াইয়ের যন্ত্রটির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন পশ্চিম তীরের তারমাস আয়া অঞ্চলের ফিলিস্তিনি-মার্কিন উদ্যোক্তা জামাল জাগুলুল। তবে তার মন রয়েছে, হাজার মাইল দূরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। এই অঞ্চলটি ফিলিস্তিনি-মার্কিনরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প অথবা কমলা, যেই নির্বাচিত হন না কেন, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে কতটুকু কার্যকর হবে তা অনেকটা অনিশ্চিত। কেননা নির্বাচনী প্রচারণায় যুদ্ধবিরতির কথা বললেও দুজনেই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন। তারা গাজায় বোমাবর্ষণ, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা, চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া, রোগের বিস্তার ঘটানো ও জোরপূর্বক স্থানান্তর প্রভৃতি ভয়ঙ্কর নীতির প্রশ্নে মন্তব্য করেননি। সুতরাং নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ নিরসনের সম্ভাবনা শূন্য। ফলে চিন্তিত গাজাবাসী।
এদিকে গাজা ও ইসরায়েলের পর আরেকটি দেশ অনেকটা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করে অপেক্ষা করছেন মার্কিন নির্বাচনের দিকে। ইউক্রেন-বাসী প্রার্থনা করছেন কমলা যেন প্রেসিডেন্ট হয়। কারণ, জয়ী হলে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন কমলা। ইউক্রেনের নাগরিক ইনানা জানান, তারা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফল নিয়ে চিন্তায় আছেন। কারণ, তাদের শত্রুকে (রাশিয়া) পরাজিত করতে চান তারা। তার দেশের ভাগ্য ঝুলছে পাঁচ হাজার মাইলেরও বেশি দূরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের হাতে। তিনি আশাবাদী কমলা জয়ী হবেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করবেন।
অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
গাজা-ইউক্রেন ছাড়াও রাশিয়ার নজরও এখন মার্কিন নির্বাচনের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করায় মস্কোর আগ্রহ অন্যদের চেয়ে বরং বেশিই থাকার কথা। ২০১৬ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে যখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলেন তখন রাশিয়ার উগ্র-জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কির আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এবারের নির্বাচনে কোনো রুশ রাজনীতিবিদ বা কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের সম্ভাবনার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে চীনেও। দেশটির সাধারণ জনগণও অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে নজর রাখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। অবশ্য তাদের মধ্যেও কিছুটা শঙ্কাও কাজ করছে। জিয়াঙ নামের ষাটোর্ধ্ব একজন চীনা নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউই যুদ্ধ দেখতে চায় না। চীন-মার্কিন সম্পর্কে টানাপড়েন ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হেরে গেলেও ট্রাম্প এখন পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করেননি। এমনকি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলায় তার উগ্র সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি সে বছর ২০ জানুয়ারি তার মেয়াদের শেষ দিনই ক্ষমতা ছেড়ে দেন। এ নিয়ে তিনি এ সপ্তাহে বলেছেন, তার হোয়াইট হাউস ছেড়ে আসা ঠিক হয়নি।
এবারের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প ও কমলা পরস্পরকে দোষারোপ ও ব্যক্তিগত বহু আক্রমণ করেছেন। ট্রাম্প না জিততে পারলে এবারও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।ৃ।