দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি: রানা দাস গুপ্ত
দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যারা দেশ ছেড়ে গেছেন তারা গেছেন। আমরা বলতে চাই, যদি বাংলাদেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ পুন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষা করার প্রয়োজন। এই সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হলে পরে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে বলে জানিয়েছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত।
এ সময় তিনি সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের উপরে নানা নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্য-নিয়ে কথা বলেছেন সারাদিন ডট নিউজের সাথে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন বিশেষ প্রতিবেদক।
সারাদিন ডট নিউজ: সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের যে দাবি জানাচ্ছেন, এটা আসলে কি? আর এর কাজ কি হবে?
রানা দাস গুপ্ত: এই সংখ্যালঘুদের উপরে নানা নির্যাতন চলছে। আসলে কিছু মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে। যে কারণে এই হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্য বাড়ছে। মানবাধিকার কমিশনের মতো আমাদের কমিশনের কাজ হবে। মানবাধিকার কমিশনই একটা বড় চ্যাপ্টার। সেখানে আমরা বলছি নারী ও শিশুর উপরে যে অত্যাচার চলছে, তাতে তাদেরকে দূর্বল মনে করছে। সমাজের একটা প্রভাবশালী মহল বা পুরুষ শাসিত এই সমাজে নারীদের দুর্বলতার অংশ বলে মনে করে নারী ও শিশুদের উপরে নির্যাতন হচ্ছে। যে কারণে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় হয়েছে। বিশেষ ভাবে এই দিকে নজর দেওয়ার জন্য। আমরাও চাই, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন করা হোক। জাতীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় হোক। সংখ্যালঘু মানে জাতীয় সংখ্যালঘু নয়।
আমাদের মূল কথা হলো, আমরা জাতীয় সংখ্যালঘু হবার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেনি। আমরা জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে হয়তো আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু হতে পারি অথবা জাতীয়তা সংখ্যালঘু হতে পারি। এই সংখ্যালঘুদের উপরে যে হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্য এই নির্দিষ্ট বিষয়গুলো দেখভালের জন্য আমরা চাই একটি সংখ্যালঘু কমিশন হোক। এবং একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় হোক।
সারাদিন ডট নিউজ: এই কমিশনটাই কি আপনাদের দাবি?
রানা দাস গুপ্ত: এটা আমরা দাবি করছি না । এই দাবিটা আমরা করেছিলাম অনেক আগে। সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই।
সারাদিন ডট নিউজ: এই কমিশন হলে আপনারা কি উপকার পাবেন?
রানা দাস গুপ্ত: আমাদের উপকার এটা যে, যদি জাতীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় হয় তবে তাদের কাজ হচ্ছে মাইনরিটির বিষয়টাকে দেখা। কিভাবে তার স্বার্থকে সংরক্ষণ করবে। কিভাবে তার সমস্যার সমাধান হবে। এই গুলোর দায়িত্ব হচ্ছে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের। আর সংখ্যালঘু কমিশন হলে পরে এটি একটি তদন্ত হবে। তদন্তের মধ্যে তারা কিছু সুপারিশ করবে। কিভাবে তারা যেন তাদের স্বার্থ রক্ষা হবে। এগুলোর জন্য আমরা সংখ্যালঘু কমিশন করার কথা বলছি। মাইনরিটির সমস্যা স্বার্থরক্ষা পরিস্থিতিকে তদন্ত করা কমিশনের কাজ। আর এসব কিছু দেখভাল করবে মন্ত্রণালয়। যেমন নারী ও শিশুদের নিয়ে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে।
সারাদিন ডট নিউজ: আপনারা যে কমিশন দাবি করছেন তা বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে আপনারা কি ধরনের আন্দোলনে যাবেন?
রানা দাস গুপ্ত: আমরা আগেও বলেছি, দায়িত্ব সরকার কথা দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দল কথা দিয়েছে। কথা দিয়েছে কথা রাখবে না। এটা আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশা করি না। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা না রাখতে পারেন অথবা না রাখেন তবে সংখ্যালঘুরা হতাশ হবে। এবং আমরা যতক্ষণ না এই দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে আমাদের মাঠের আন্দোলন চলছে।
সারাদিন ডট নিউজ: হঠাৎ যে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ বাড়ছে, এটির কারণ কি বলে আপনি মনে করেন।
রানা দাস গুপ্ত: কথা একেবারে পরিষ্কার। ২০২৫ সালের দিকে একটা ভোট হবে। অতীতের কথা বলছি না। ২০২৫ সালের দিকে একটা নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে যাতে মুক্তিযুদ্ধের ধারাটা অব্যাহত না থাকে তার জন্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কথা বলে নানান ভাবে নির্যাতন, তাদেরকে বিরক্ত করা, তাদের মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা, এই যে অত্যাচারগুলো নির্বিচারে হচ্ছে আর দেশ ত্যাগের হুমকিও দেওয়া। এমনকি হুমকি এসেছে। আর কেউ কেউ বলছে ২০২৫ সালের মধ্যে আবার কেউ বলছে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূন্য হয়ে যাবে। আর বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে এই কথা গুলো বলছে। সেখানে আমরা বলতে চাই আমরা বাংলার মানুষ। বাংলাদেশ ছেড়ে যাবো না। দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যারা দেশ ছেড়ে গেছেন তারা গেছেন।
যদি বাংলাদেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ পুন:প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষা প্রয়োজন। সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হলে; গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিপন্ন হবে; বাংলাদেশের ভবিষ্যতও বিপন্ন হবে। বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ যদি দুর্বল হয়, গোটা পৃথিবীতে তারা সংখ্যালঘু নয়। আজকের বাংলাদেশ যদি রাষ্ট্র ও রাজনীতি দুর্বল করে দেয়, তবে একদিকে যেমন অগ্রগতিটা যথার্থভাবে হবে না, অন্যদিকে অন্যদেশের সংখ্যালঘুদের দুর্বল থেকে দূর্বলতর হবে না। সেটাও এখন সবাইকে দেখতে হবে।
সারাদিন ডট নিউজ: ওকে ধন্যবাদ।
রানা দাস গুপ্ত: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সারাদিন/১২নভেম্বর/টিআর/আরএসটি