অনলাইনে বাগেরহাটের চুই-ঝাল বিক্রি করে সফল ‘রোহানা’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২২

আর দশটি মেয়ের মতো সংসার ও সন্তান লালন-পালন করেন মেয়েটি। থেমে নেই পরিবারের অন্যসব কাজ। সব বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সামলান তিনি। কিন্তু মনের মধ্যে সুপ্ত বাসনা ছিলো; কিছু একটা করবেন। নিজেই কিছু করবেন। কিন্তু কি করবেন? অবশেষে ফেসবুকে পেজ খুলে দেশি চুই-ঝাল রেডি টু কুক-তৈরি করে বিক্রি করেন। ব্যাস- আর পেছনে তাকাতে হয়নি উদ্যোক্তা রোহানা আক্তার রত্ন-র।

তার সম্পর্কে জানাচ্ছেন-সারাদিন ডট নিউজের সিনিয়র প্রতিবেদক; শাহজালাল রোহান।

সারাদিন ডট নিউজ: কেমন আছেন? কী নিয়ে ব্যস্ত? আপনার উদ্যোগ নিয়ে জানতে চাই?

রোহানা: ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। খুলনা-বাগেরহাটের চুই-ঝাল ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং পাশাপাশি দেশীয় তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস ও বিলুপ্তপ্রায় মাদুলি-গয়না নিয়ে কাজ করছি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম – মায়ের হেঁশেল। আমার সিগনেচার পণ্য দেশি চুই-ঝাল রেডি টু কুক পদ্ধতি শুরু করার পর সবচেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ, গত এক বছরে অনলাইনে ৮৬ কেজির বেশি দেশীয় চুই-ঝাল, পাঁচ পিস পপকর্ন খেস শাড়ি এবং দুই সেট মাদুলি-গয়না সেল করেছি।’

সারাদিন ডট নিউজ: পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

রোহানা: আমার বাবা-মা এবং আমার শ্বশুর-শাশুড়ি; আমার হ্যাসব্যান্ড ও আমার তিন বছর বয়সী ছেলে—সবাই আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ প্রদান করছে।’

Nagad

সারাদিন ডট নিউজ: বিশেষ দিনগুলোকে কেন্দ্র করে বিক্রি কেমন বাড়ে?

রোহানা: ‘বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে কেনাকাটা জমে ওঠে, তবে এখন লকডাউনকে কেন্দ্র করে অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। আমিও এবার কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে দেশি চুই-ঝাল ও তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস এবং মাদুলি-গয়না সেট নিয়ে প্রচার করছি।’

সারাদিন ডট নিউজ: আপনার পন্যের মান কিভাবে রক্ষা করেন?

রোহানা: আমি কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটির সাথে কম্প্রোমাইজ করি না।

সারাদিন ডট নিউজ: উদ্যোক্তা হওয়ার পরে মধুর স্মৃতি?

রোহানা: ‘মধুর স্মৃতির কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলব, আমাদের উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুকে আমার উদ্যোগের কাস্টমার হিসেবে পেয়েছি, তাই খুশি আমার ছেলে এবং হাসব্যান্ডকে নিজেই আপুর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম ডেলিভারি দিতে; কিন্তু নিশা আপুর সঙ্গে দেখা হয়নি, আপু একটা মিটিংয়ে ছিলেন। আমার উদ্যোক্তা-জীবনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত আল্লাহ তা-আলার রহমত এবং আমার পরিবার ও উই গ্রুপের সবার উৎসাহ-অনুপ্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

সারাদিন ডট নিউজ: উই-এর ফেসবুক গ্রুপ রোহানার উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

রোহানা: ‘আমার এক বড় আপু মরিয়ম মৌরি উই গ্রুপে আমাকে সদস্য হতে ইনভাইট পাঠায়। আমি ২০২০ সালের ২১ মার্চ উই গ্রুপের সদস্য হই, কিন্তু উই গ্রুপের মানে বুঝতে পারিনি তখন। প্রতিদিন সবার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প পড়ে ধারণা নিয়েছিলাম উই গ্রুপ দেশীয় পণ্যের একমাত্র ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম; এর পর গত বছর লকডাউনের সময় যখন আমার বাবার শুটিং বন্ধ ছিল, আশপাশের পরিস্থিতি তেমন ভালো ছিল না, বাবা-মা বাসায় বসে ডিপ্রেশনে পড়ে যাবে—এই ভাবনা থেকে আমার মাকে বললাম, আম্মু চলো উই গ্রুপে তোমার ফ্রোজেন রুটি ও পরোটা এবং চালের ঝাল-মিষ্টি নাড়ু নিয়ে পোস্ট দিই। আম্মু রাজি হলো। তার পর থেকে উই গ্রুপে অ্যাকটিভ থাকার সুফল পেয়েছি, প্রথম পোস্ট থেকেই অর্ডার আসা শুরু করেছিল।’

সারাদিন ডট নিউজ:  কতটা সফল হয়েছেন?

রোহানা: ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি লাখপতি হয়েছি। লাখপতি হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের বলতে চাই, কারও লাখপতি হওয়ার সেল আপডেট দেখে হতাশ না হয়ে উই গ্রুপে নিজের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করুন। দেখবেন, ইনশা আল্লাহ আপনি সফল হবেন।’

সারাদিন ডট নিউজ: আগামী দিনের পরিকল্পনা কী?

রোহানা: আমার আগামী দিনের পরিকল্পনা আমার বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী একটা ছোট মাছের ঘের নিয়ে বাবার কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে চুই-ঝাল চাষ করা।

সারাদিন ডট নিউজ: বেকার সমস্যা নিরসনে আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কী?

রোহানা: বেকারত্ব দূর করতে অনলাইন বিজনেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি। আমি নিজেকে দিয়ে বলতে পারি।  কারণ অনলাইন বিজনেস করে সাবলম্বী হবার জন্য শুধুমাত্র মেধা শক্তির সঠিক প্রয়োগ ও কঠোর পরিশ্রম করার মনোবল থাকলে সফলতা আসবেই।

রোহানা ২০১৫-২০১৬ সেশনের সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন বলেও জানান।

সারাদিন ডট নিউজ: ধন্যবাদ

রোহানা: আপনাকেও ধন্যবাদ।