পার্বত্য অঞ্চলের নারীদের জীবনমান উন্নয়নে উদ্ভাবনী আইডিয়া প্রতিযোগিতা শুরু
পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের জীবনমান উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাড এবং রান্নার চুলা উদ্ভাবনের খোঁজে আইডিয়া প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ইউএনডিপি স্ট্রেংথেনিং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইন চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস (এসআইডি-সিএইচটি) আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে এটুআই ইনোভেশন ল্যাব এবং আর্থিক সহাযোগিতা প্রদান করছে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা।
এলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম।
এসময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি জনাব প্রসেনজিৎ চাকমা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসআইডি-সিএইচটি এর এনপিডি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) জনাব সত্যেন্দ্র কুমার সরকার।
সরকার কর্তৃক পরিচালিত বেইজলাইন ন্যাশনাল হাইজিন জরিপ ২০১৮ অনুসারে বাংলাদেশে মাত্র ১৩ ভাগ নারী সঠিক মাসিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও সচেতনতার অভাবে এখনও পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী ও মেয়েরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। এছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতির কারণে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে এখনও তারা কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণা ও পৌরাণিক কাহিনীর উপর বিশ্বাস করেন এবং সমাজের লোকেরা মাসিকের বিষয়টিকে অসম্মানজনক বলে মনে করেন।
অন্যদিকে, পার্বত্য অঞ্চলের দারিদ্র্য এবং লিঙ্গ বৈষ্যমের কারণে নারীরা গৃহস্থালির কাজ এবং গৃহস্থালির জ্বালানির চাহিদা যেমন- কাঠ এবং অন্যান্য জৈববস্তু সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত থাকেন। রান্নায় কাঠ-কয়লা সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে নারীদের অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া, বন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা নিরাপত্তা এবং যৌন সহিংসতার মতো ঝুঁকিরও সম্মুখীন হন। এই দু’টি সমস্যার সমাধানে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় বসবাস করা মেয়ে ও নারীদের জন্য পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাড এবং উন্নত রান্নার চুলা উদ্ভাবনের সর্বোত্তম সমাধানের খোঁজে এই আইডিয়া প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ এর মধ্যে আগ্রহী উদ্ভাবকেরা তাদের আইডিয়া জমা দিতে পারবেন। নাগরিকদের কাছ থেকে জমা হওয়া উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলো থেকে সম্মানিত জুরি বোর্ড টেকসই ও সাশ্রয়ী দুটি আইডিয়াকে পুরস্কৃত করবেন। পরবর্তীতে এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দু’টি নতুন উদ্ভাবনকে প্রোটোটাইপ উন্নয়ন এবং পাইলটিং এর জন্য সীড মানি হিসেবে ২৫ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হবে। এই প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ilab.gov.bd/cht-challenge-2022/ ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা আগে থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় উদ্ভাবন সবার ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করতে পারলে উদ্ভাবনের সম্ভাবনাগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এধরনের স্থানীয় উদ্ভাবনের ফলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যেও উদ্ভাবন চর্চা বৃদ্ধি পাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এটুআই এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, সরকারি সেবাগুলোকে আরো বেশি জনবান্ধব করতে আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি। জ্বালানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর স্থানীয় উদ্ভাবন নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর সহযোগিতা করতে এটুআই সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব সত্যেন্দ্র কুমার সরকার বলেন, শুধু আজকের উদ্বোধন হওয়া চ্যালেঞ্জ দুটোই নয় অন্য যেকোনো সমস্যার সমাধান নিয়ে আসলেও আমরা প্রকল্ল থেকে অথবা মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা প্রদান করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও উদ্ভাবন পাবত্য অঞ্চলে পৌঁছে দিতে এটুআই এর সাথে সমন্বয় করে ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতে চ্যালেঞ্জ ফান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন ঝুমা দেওয়ান, চিফ, জেন্ডার অ্যান্ড কমিউনিটি কোহেসন, ইউএনডিপি-এর এসআইডি-সিএইচটি; সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন সুপ্রদীপ চাকমা, এনপিএম, সিআইডি-সিএইচটি, ইউএনডিপি; চ্যালেঞ্জ ফান্ডের উপর একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন এটুআই-আইল্যাব এর হেড অব টেকনোলজি ফারুক আহমেদ জুয়েল। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, এটুআই, ইউএনডিপি-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদ এবং গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
সারাদিন.১৬ আগস্ট. এসআর