‘সরকারি হাসপাতালত আচ্ছি, তাও ট্যাকা দিয়া ওষুধ কেনা নাগতিছে’

গাইবান্ধা সংবাদদাতাগাইবান্ধা সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২

সংগৃহীত

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন রোগীরা। শারীরিক দুর্বলতাজনিত কারণে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের কাটিহারা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কুলসুম বেগম।

তিনি বলেন, “হাসপাতালত ভর্তি হছি কাইলকে (হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি গতকাল)। আজ দুপুর হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ডাক্তার আসে নাই দেখপের (দেখতে)। শুধু একটা স্যালাইন দিছে। সে স্যালাইনটা বাহির থেকে কিনি আনছি। সরকারি হাসপাতালত আচ্ছি (সরকারি হাসপাতালে আছি) তাও ট্যাকা (টাকা) দিয়া ওষুধ কেনা নাগতিছে (লাগছে)। হামরা (আমরা) গরিব মানুষরা কেমনে চিকিৎসা করমো (করবো), বাবা?”

এমন অভিযোগ শুধু কুলসুম বেগমের নয়, আঞ্জুয়ারা, মোশারফ হোসেন, ফরিদ মিয়া, লাইলী বেগমসহ আরও অনেকের। তাদের অভিযোগ, তারা হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা পান না।

রোগী ও স্বজনরা জানায়, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ। চিকিৎসকরাও ঠিকমতো রোগী দেখেন না। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়।

জানা গেছে, গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও অবকাঠামো ১০০ জনের। রোগী ভর্তি আছেন ২৮০ জন। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা ও একই বেডে দুজন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বোর্ড বাজারের আঞ্জুয়ারা বলেন, “বিছানা না পেয়ে বারান্দায় শুয়ে আছি। মাথার ওপর ফ্যান নাই। গরমে থাকতে পারছি না। এমনিতেই পেট ব্যথা, তার ওপর নোংরা পরিবেশ। এই পরিবেশে মানুষ সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, আরও অসুস্থ হবে।”

Nagad

পা-ভাঙা রোগী মোশারফ হোসেন বলেন, “পাও (পা) প্লাস্টার করতে ট্যাকা চায় এক হাজার। ৮০০ ট্যাকা দিবার চাচ্ছি (দেবো বলেছি)। তাও প্লাস্টার করি দেয় না। হামরা গরিব মানুষরা কেমনে চিকিৎসা করমো, বাহে (ভাই)?”

তুলশীঘাট থেকে চিকিৎসা নিতে আসা লাইলী বেগম (৫৫) গণমাধ্যমকে বলেন, “ট্যাকা দিয়ে যদি ওষুধ নেওয়া নাগে, তাহলে সরকারি হাসপাতালে আসিয়া হামার কী হলো? ট্যাকা যদি থাকলোই (যদি টাকাই থাকতো) তাহলে কি হামরা ওষুধ নেওয়ার জন্যে হাঁটি হাঁটি (হেঁটে হেঁটে) হাসপাতালত আসলেম হয় (হাসপাতালে আসতে হয়)?”

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শিহাব মো: রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ১০০ জনের অবকাঠামোতে ২৮০ জন রোগী ভর্তি থাকলে কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, যেখানে একজন রোগীর সাথে লোক আসার কথা একজন, সেখানে প্রতিদিনই ৪-৫ জন আসেন। এতো লোকের সেবা দেওয়ার মতো জনবল হাসপাতালে নেই।

তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রোগীর চাপ বেশি হলেও স্বাস্থ্যসেবায় ঘাটতি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

সারাদিন/২১ সেপ্টেম্বর/এমবি