জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মা’কে বাড়ি থেকে বের করে দিলো সৎ ছেলে

গাজীপুর সংবাদদাতাগাজীপুর সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১:৩১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২২

সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধা বয়সে দেখভাল করার কথা বলে মায়ের জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতি মোস্তফার বিরুদ্ধে। এরপর দেখভাল তো দূরের কথা গত ছয় মাস আগে মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তার ছেলে ও নাতি!

রোববার (০২ অক্টোবর) শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়া গ্রামে এই তথ্য পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী রহিমন নেসা (৭০) উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর স্ত্রী। তিনি তার সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন (৬০) ও নাতি মোস্তফা কামালের (৪০) বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তুলেছেন।

জানা গেছে, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর রহিমন নেসাকে বিয়ে করেন আনসার আলী। দীর্ঘদিন সংসার করার পরও রহিমন নেসার কোনো সন্তান হয়নি। দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমন নেসা, ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ছিল আনসার আলীর সংসার। প্রায় ১৫ বছর আগে রহিমন নেসার স্বামী আনসার আলী মারা যান। সৎ ছেলে ও মেয়েদের নিয়েই থাকত রহিমন নেসা।

এদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতি মোস্তফা তার অংশের জমি লিখে নিয়েছে বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল করার কথা বলে। কিন্তু দেখভাল তো দূরের কথা ছয় মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তার সৎ ছেলে ও নাতি। প্রতিবেশীরা রহিমনকে আশ্রয় দিয়েছিল, তবে আশ্রয়দাতাকে হুমকি দেওয়ায় এখন প্রতিবেশীরাও তাকে আশ্রয় দিচ্ছে না।

ভুক্তভোগী রহিমন নেসা গণমাধ্যমকে জানান, স্বামী যখন তাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন তখন তার সন্তানরা অনেক ছোট। তিনি আগের ঘরের এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিজ সন্তানের মতো করে বড় করেছেন। তবে শেষ বয়সে তার সাথে এমন আচরণ করবে, তা তিনি ভাবতেও পারেননি। সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতি মোস্তফা বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর পাড়া-প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন বাড়িতে থাকছেন, একবেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। তিনি জানান, সম্প্রতি রহিমনকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর উদ্যোগ নেন সৎ ছেলে আফাজ। এনিয়ে তারা বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে জানায়, বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হলে করোনা সনদ থাকতে হবে। তাই শনিবার (০১ অক্টোবর) আরেক নাতনি শারজিন রিকশাযোগে কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা দেওয়ার কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে বের হন। টিকা দেওয়ার কথা বলে রহিমনকে অন্য কোথাও ছেড়ে আসতে পারেন তারা- এমন সন্দেহ হয়। তাই গ্রামের লোকজন বাধা দিয়েছে। এনিয়ে ছেলে আফাজের সাথে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডা হয়েছে।

Nagad

বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর দীর্ঘদিন ছিলেন পার্শ্ববর্তী সাহেরা খাতুনের আশ্রয়ে। সাহেরা খাতুন বলেন, রহিমনকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে প্রায় তার সৎ ছেলের পরিবারের লোকজন নানা ধরণের বিদ্রুপমূলক কথাবার্তা বলতো। আমার স্বামী নাই, তাই রহিমন খালাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানেও তার ছেলে-নাতি তাকে আশ্রয় না দিতে নারা ধরনের পরামর্শ দিত।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন মাস্টার গণমাধ্যমকে বলেন, জমিজমা ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। আমি ইউপি সদস্য থাকাকালে বিষয়টি একাধিকবার সমাধান করেছি। এখন কী অবস্থায় আছে তা আমার জানা নেই।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বৃদ্ধাকে সরকারি যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

সারাদিন/০৩ অক্টোবর/এমবি