‘জ্বালানির দামবৃদ্ধি পেলে শীতে ইউরোপে মৃত্যুহার ১২ শতাংশ হতে পারে’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:২৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২২

ছবি- সংগৃহীত

জ্বালানির দামবৃদ্ধি ইউরোপে শীতকালীন মৃত্যুর ওপর নিম্ন তাপমাত্রার প্রভাবকে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি ইউরোপের দেশগুলোতে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেলে শীতকালীন মৃত্যুহার ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে একটি গবেষণায় জানা গেছে।

লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এইসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ইউরোপের গড় আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে মৃত্যুহার শুন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে যায়। কারণ জ্বালানি বা বিদ্যুতের দাম বাড়লে এই অঞ্চলের অনেক পরিবারই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

দ্য ইকোনমিস্ট একটি মডেল প্রয়োগ করে দেখে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোনো ইউরোপীয় দেশের অন্যান্য বিষয় স্থির রেখে, বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেলে শীতকালে সাপ্তাহিক মৃত্যুর হার আনুমানিক ৩ শতাংশ বেড়ে যায়। বিপরীতে, ওই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেলে শীতকালীন মৃত্যুহার ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

তবে এখন ইউরোপে জ্বালানির দাম আগের থেকে অনেক বেশি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির ফলে ২০২০ সালের পরবর্তী সময়ের বিদ্যুৎখরচ ২০০০-১৯ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশিস হয়েছে। তাই অনেকের ধারণা, এবার জ্বালানিব্যয় ও শীতকালীন মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক অতীতের তুলনায় অনেক বেশি বাড়তে পারে।

দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, মৃত্যুহার বাড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হতে পারে করোনাভাইরাস। কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় এই ভাইরাস অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা অধিকাংশ বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষদের প্রাণহানী ঘটাতে সক্ষম।

Nagad

অনেকের মতে এই শীতে ইউরোপে কতজন মানুষ মারা যেতে পারেন, তা একেবারে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে দ্য ইকোনমিস্টের গবেষণা অনুযায়ী, ২০০০-১৯ সালের মতো পরিস্থিতি যদি ২০২২-২৩ সালেও অব্যাহত থাকে, তাহলে রাশিয়ার ‘জেনারেল উইন্টার’ অত্যন্ত শক্তিশালী প্রমাণিত হবে।

এদিকে, বিদ্যুতের দাম যদি বর্তমানে যা আছে তাই থাকে ও এই সংক্রান্ত গড় খরচ যদি ২০১৫-১৯ সালের খরচে ফিরে যায় তাহলেও এই শীতে ১ লাখ ৪৭ হাজার মানুষ মারা যাবেন। যা গড় মৃত্যুর থেকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

আবার বর্তমান পরিস্থিতি ইউরোপের সব দেশের শীতকালীন তাপমাত্রা যদি অনেক বেশিও হয়, তাহলে ৭৯ হাজার মানুষ মারা যাবেন, যা গড় মৃত্যুর তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। আবার যদি ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইউরোপের তাপমাত্রার সর্বনিম্ম হয় তাহলে, ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ মানুষ মারা যাবেন, যা গড়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।

দ্য ইকোনমিস্টের মডেল অনুযায়ী, জ্বালানির দামবৃদ্ধি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উভয়পক্ষের যে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার সৈন্য মারা গেছেন, তার থেকেও বেশি মৃত্যু ঘটাবে। যদিও এখানে বয়সের একটি পার্থক্য থাকতে পারে। কারণ যুদ্ধে যারা মারা গেছেন, তারা অধিকাংশই যুবক। আর ঠান্ডায় যারা মারা যাবেন, তাদের বেশিরভাগই হবেন বয়স্ক নাগরিক।

সারাদিন/২৭ নভেম্বর/এমবি