নারায়ণগঞ্জে সম্পত্তির লোভে মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে হত্যা, সাজালেন ডাকাতির নাটক

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:২৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩

হত্যায় সরাসরি জড়িত রুবেল নামে এক অটোচালককে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। সংগৃহীত ছবি

মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে নৃশংসভাবে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর ডাকাতির নাটক সাজিয়েছিল তারই ছেলে এইচ এম মাসুদ। এই ঘটনার তদন্তে নেমে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি ঘটনায় জড়িত ঘাতক ছেলেকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে ছেলে ছাড়াও হত্যায় সরাসরি জড়িত রুবেল নামে এক অটোচালককে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি পিবিআই সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

পিবিআই বলছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ধর্মগঞ্জ মাওলা বাজার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা হালিমকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ডাকাত সদস্যরা। গত ৩১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাত সদস্যরা বাসায় থাকা নগদ ৩২ লাখ ও সিসিটিভি ডিভিআর নিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে জামাই থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি এসব কথা উল্লেখ করেন।

তবে পুলিশের বিশেষ সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে অন্য ঘটনা বেরিয়ে আসে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। মামলার তদন্তে নেমে সম্পত্তির লোভে পুত্রের পরিকল্পনায় পিতা হত্যার এক লোমহর্ষক ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায় পিবিআই।

এ ঘটনায় জড়িত গ্রেপ্তার রুবেলের দেখানো জায়গা থেকে চুক্তির সাড়ে চার লাখ টাকা, সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর ও পাটের রশি উদ্ধার করা হয়।

মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা টিম মামলার মূল রহস্য উদ্‌ঘাটন ও জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে জানা যায়, পরিবারের পূর্বপরিচিত অটোচালক মো. রুবেল। তিনি এই পরিবারের বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। কিন্তু ঘটনার পরে তাঁকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন, ঘটনার সময় ভুক্তভোগীর বাড়ির আশপাশে অবস্থান করছিলেন রুবেল। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বোনের বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেপ্তার রুবেল ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন।

Nagad

পুলিশ জানায়, রুবেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছে, নিহতের পরিবারের বিভিন্ন কাজকর্ম করে বিশ্বস্ততা অর্জন করেছিলেন রুবেল। নিহতের ছেলে এইচ এম মাসুদ সম্পত্তি ভাগাভাগি এবং বাসায় থাকা টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেন। আর এ জন্য পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে রুবেলের সঙ্গে বাবাকে হত্যার চুক্তি করেন। ঘটনার দিন ৩১ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে রুবেলকে ফোন করে দ্রুত মাসুদের বাড়িতে আসতে বলা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকে খুলে রাখা হয় কলাপসিবল গেট ও রুমের দরজা। এরপর রুবেল সোজা মাসুদের রুমে প্রবেশ করে। রাত ১১টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম ঘুমিয়ে পড়লে রুবেল ও মাসুদ তাঁর রুমে প্রবেশ করেন। প্রথমে নিহতের ছেলে মাসুদ তাঁর বাবার হাত-পা চেপে ধরে, আর রুবেল গলা চেপে ধরেন। এ সময় চিৎকার দিলে রুবেল বালিশ দিয়ে মুখ চেপে শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। মাসুদ বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘরে থাকা ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার দিয়ে মেপে মৃত্যু নিশ্চিত হন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী রুবেলকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয় এবং বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর বক্স বাইরে ফেলে দিতে বলা হয়। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ডাকাতির নাটক সাজাতে বাবাকে পাটের রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে এবং গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে ফ্লোরে ফেলে রাখতে বলেন মাসুদ। এরপর রুবেল তা করে টাকা আর ডিভিআর বক্স নিয়ে বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় রুবেল ডিভিআর বক্সটি নিহতের বাড়ির পেছনে ময়লার স্তূপের নিচে লুকিয়ে রেখে যান।

ঘটনার পরদিন নিহতের জানাজা এবং লাশ দাফন শেষে মাসুদের পরামর্শে রুবেল আত্মগোপনে চলে যান। নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে যাত্রাবাড়ীতে বোনের বাসায় আত্মগোপনে যান। সেখান থেকে গ্রেপ্তার শেষে রুবেলকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁর বাসা থেকে চার লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং নিহতের বাড়ির পেছনের ময়লার স্তূপ থেকে ডিভিআর উদ্ধার করা হয়।

আলামত হিসেবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাটের রশি,গামছ, বালিশ ও ডিজিটাল ব্লাড প্রেশার মাপার মেশিন জব্দ করা হয়। এই মামলার অন্যতম আসামি নিহতের ছেলে মাসুদকে গ্রেপ্তারে জন্য অভিযান চলমান রয়েছে। সূত্র: আজকের পত্রিকা ।