‘হিজরতের’ ডাকে ঘরছাড়া ৫৫ তরুণের ১২ জন গ্রেপ্তার, ২১ পলাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৪:২৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০২৩

রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সংগৃহীত ছবি

জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার ‘হিজরতের’ ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরছাড়া ৫৫ তরুণের মধ্যে ৩৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ২১ জন জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেই রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

নতুন জঙ্গি সংগঠনটির আমির আনিছুর রহমান ওরফে মাহমুদ এবং দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহবিষয়ক উগ্রবাদী বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও কনটেন্ট উদ্ধার হওয়ার পর এ তথ্য জানায় র‌্যাব। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরমধ্যে গ্রেপ্তার আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছ থেকে ওই ভিডিওটি উদ্ধার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরের কাছ থেকে একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ওই ভিডিওতে মোট ২৯ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার হওয়া নতুন ভিডিওতে আরও ২৩ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা হয়। ওই ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি আগের ভিডিওতেও ছিলেন। আর চারজন নতুন জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ভিডিওর তথ্যানুযায়ী, এরমধ্যে ডা. জহিরুল নামে একজন গত বছরের ৬ জুন মারা গেছেন।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ভিডিওতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে থাকা মোট ৩৩ জনকে শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারা নিজেদের গ্রুপের মধ্যেই এগুলো সরবরাহ করেছে। কোনো নাশকতার পরে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে এটি ব্যবহৃত হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে সংগঠনটির আমিরই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছে গ্রেফতাররা। তবে এখন নতুনদের উদ্বুদ্ধ করে সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহের জন্য ভিডিওটি ব্যবহৃত হচ্ছিল।

Nagad

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নিজেদের স্বার্থেই নতুন জঙ্গি সংগঠনকে আশ্রয়, রশদ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর বড় স্বার্থ অর্থ। এছাড়া, যে ৬০-৭০ জনের যে টিম তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এতে তাদের শক্তিও বেড়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো স্বার্থের বিষয় রয়েছে কি না কুকি চিনের নেতৃত্ব পর্যায়ের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারলে জানা যাবে।

নতুন জঙ্গি সংগঠনের প্রধান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণে প্রধান সমন্বয়কারী শামিন মাহফুজ। সংগঠনটি ২০১৭ সালে কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১৯-২০ এসে নামকরণ করা হয়। প্রথমে সংগঠনের প্রধান বা আমির ছিলেন রক্সি। কিন্তু সর্বশেষ ২০২১ সালে রক্সি গ্রেফতারের পর ২০২২ সালে সবাই বৈঠক করে মাহমুদকে আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

যখন রক্সিকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট তথ্য ছিল না। তাকে সে সময় অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।

নতুন সংগঠনের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, সর্বশেষ যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের সমতলে আত্মগোপণের নির্দেশনা ছিল। এজন্য তারা চারদিন ধরে পাহাড় থেকে হেঁটে বান্দরবান শহরে আসে। তাদের বিচ্ছিন্নভাবে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এখন তাদের কি শুধু আত্মগোপন নাকি অন্য কোনো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

র‌্যাবের অব্যাহত অভিযানে এখন পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৯ জন জঙ্গি ও তাদের প্রশিক্ষণের সহায়তার অভিযোগে ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠনের দুজনকে ডি-র‌্যাডিকালাইজড করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।