এলসি জটিলতায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি কমেছে : বারবিডা সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ৬, ২০২৩

ডলার সংকটে তৈরি হওয়া এলসি জটিলতায় গত ছয় মাসে ৭৫ শতাংশ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছে এ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারবিডা)।

মঙ্গলবার (৬জুন) রাজধানীর শাহবাগের ঢাকা ক্লাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন।

এ সময় তিনি বলেন, যারা নতুন বা ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি করে তাদের অধিকাংশই ব্যাংকের মালিক। ডলার সংকটের সময়ও দেশে ব্রান্ডের গাড়ির আমদানি হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি করি তারা কেউই ব্যাংকের মালিক নয়। এ কারণে এলসি খুলতে সমস্যা হয়েছে।

বারভিডার সভাপতি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গাড়ির বাজার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের সংকটের ফলে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে গাড়ির দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক কমানো এবং মাইক্রোবাস ও বৈদ্যুতিক গাড়ির সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক কমানো এবং মাইক্রোবাস ও বৈদ্যুতিক গাড়ির সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করলে গাড়ির দাম মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এর ফলে বাজার সম্প্রসারণের সাথে সাথে সরকারের রাজস্ব আয়ও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, সারা বিশ্বেই এখন আর্থিক সংকট চলছে। বাংলাদেশেও এর আঁচ পড়েছে। এ কারণে নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক রাখতে সরকার অনেক বিলাসী পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করেছে। অচিরেই ডলার সংকট কেটে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

Nagad

তিনি বলেন, এনবিআরের সঙ্গে প্রাক- বাজেট আলোচনায় আমরা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভূক্তির জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির গাড়ির শুল্ক-কর পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিলাম। হাইব্রিড প্রযুক্তির মোটরগাড়িতে সিসি ভিত্তিক শুল্ক-করের হার বিদ্যমান রয়েছে। উৎপাদক এবং ব্যবহারকারী অন্য দেশগুলোর সাথে মিল রেখে সিসি স্ল্যাবের সংস্কার এবং পরিবর্তন দরকার। আমরা বাজেট প্রস্তাবনায় তাই জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব হাইব্রিড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করেছিলাম। যাতে এসব গাড়ি আমদানি সহজলভ্য হয় এবং দেশের ভোক্তাশ্রেণি উপকৃত হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে হাইব্রিড কার ও জিপ (১৮০১ সিসি থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত) আমদানিতে শুল্ক হ্রাস না করায় আমাদের খাতের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে তা বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া দেশের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের কারণে আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠা শিল্প কারখানাগুলোকে যাতায়াতের নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা জিপ গাড়ির সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছিলাম। আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্ক কমানো হলে এসব গাড়ি আমদানি বৃদ্ধি এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, চীন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি ও ব্যবহারে ব্যাপক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ মোটরযানে ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমে আসায় বাংলাদেশেও বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায়, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি উৎসাহিত করতে এসব গাড়িকে সব ধরনের শুল্ক-কর হতে অব্যাহতি দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বারভিডা প্রেসিডেন্ট।

এছাড়া গণপরিবহন হিসেবে মাইক্রোবাসের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার ও দ্বিতীয় গাড়ির ক্ষেত্রে পরিবেশ সারচার্জ নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের যে পরিকল্পনা, তা আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে বারভিডা।

এ ব্যাপারে হাবিব উল্লাহ বলেন, যদি কেউ দ্বিতীয় গাড়ি ব্যবহার করেন এবং সেই গাড়ি যদি কোনো কার্বন তৈরিতে সহায়তা না করে তাহলে তাকে কেন কার্বন কর দিতে হবে। এটি ভেবে দেখা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে বারভিডার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আবদুল হকসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।