চট্টগ্রামে বন্যায় সবকিছু লন্ডভন্ড, ১৮ জনের মৃত্যু
আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলা সাতকানিয়া-লোহাগাড়া-চন্দনাইশে ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু লন্ডভন্ড হয়েছে। গত মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) থেকে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) পর্যন্ত টানা তিনদিনে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ।
রোববার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত ওই এলাকার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় শিশু-বৃদ্ধসহ মোট ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, তিন উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় বেশিরভাগ মাটির ঘর ভেঙে গেছে। এছাড়া অন্যান্য কাঁচাঘরও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাকাঘরের আসবাবপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। এই তিন উপজেলার বুক চিরে যাওয়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও কেরানিহাট-বান্দরবান সড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষয়ে গেছে। এছাড়া দুটি সড়কের বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। টানা দুদিন সড়কের ওপর কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি ছিল। ওই সময়ে যানচলাচল প্রায়ই বন্ধ ছিল।
পানি নামার পর সড়কে বড় বড় গর্ত দেখা যায়। বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের কোনো কোনো অংশ স্রোতে ভেসে গেছে। ফলে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া এই তিন উপজেলার ফসলের ক্ষেত থেকে মাছের খামার প্রায় সবই তলিয়ে গেছে।
আরও জানা গেছে, কেরানিহাট ও তেমুহনী কেঁওচিয়া এলাকার দুই কিলোমিটার রেললাইনের অন্তত ২০ স্থানে দেবে গেছে। বিভিন্ন স্থানে পাথর সরে গিয়ে পার্শ্ববর্তী জমিতে পড়েছে। এছাড়াও লাইনের বিভিন্ন অংশের মাটি ক্ষয়ে গেছে। অথচ আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এই লেন দিয়ে ট্রেন কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
কক্সবাজার রেল প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যার কারণে সাতকানিয়া উপজেলার তেমুহনী মৌজায় আধ-কিলোমিটারের মতো অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পানির ঘূর্ণির কারণে রেললাইনের নিচের মাটি ক্ষয়ে গেছে। এগুলো ঠিক করার জন্য আলাদা টিম কাজ করবে। প্রকল্পের কাজও চলবে আবার একইসাথে মেরামতও চলবে। সুতরাং যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
এলজিইডি নির্বাহী পরিচালক (চট্টগ্রাম) মোহাম্মদ হাসান আলী গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যায় বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করছেন। কয়েকদিনের মধ্যে এই কাজটি শেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। এরপর সড়কগুলো দ্রুত মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে একজন। নিহতদের মধ্যে সাতকানিয়ায় ৯, লোহাগাড়ায় ৪, চন্দনাইশে ২, বাঁশখালীতে ১ ও রাউজানে ১ এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১ জন রয়েছে।
সারাদিন/১৩ আগস্ট/এমবি