শেষ হলো ‘চট্টগ্রাম ফুড ফেস্টিভ্যাল ২০২৪’

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ৭:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪

চট্টগ্রামের মানুষ ভোজন প্রিয়। রসনায় তৃপ্তির ঢেকুর নিতে তারা সারাদেশের চেয়ে ভিন্ন। শীতের সন্ধ্যায় শীতল হাওয়া সবার সঙ্গে চায়ের চুমুকে আড্ডা সবার পছন্দ। চিতই, ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, পুলি পিঠা, দুধ পিঠাসহ বিভিন্ন শীতকালীন পিঠা, সাথে চটপটি, ইন্ডিয়ান, ইতালিয়ান, মেক্সিকান, চাইনিজ ও অ্যারাবিয়ান খাবারের এমন সব আয়োজনে এক ভিন্ন খাদ্যভোজন উপভোগ করেছে খাদ্য রসিক চট্টগ্রামবাসী। তিনদিন ধরে চলা বাওয়া মাঠের এই উৎসব গত রোববার শেষ হয়।

বিভিন্ন ধরনের খাবার একসাথে একই জায়গায় পেয়ে খুশি খাদ্য রসিকরা। পাশাপাশি এমন আয়োজন বারবার হোক তারা দাবিও তুলছেন। ফেসবুক ভিত্তিক ফুড লাভার্স গ্রুপ চট্টগ্রাম ‘ফুডমাস্টার’ এবং হুইজ কমিউনিকেশনের যৌথ এ আয়োজনে দেশি বিদেশী প্রায় ৪০টিও অধিক খাবারের রেস্টুরেন্ট, ফুড কার্ট ও হোম মেইড ফুড স্টল অংশ নেয়।

মেলার শেষ দিনে ঢুকতে দেখা মেলে দেশীয় পিঠার উৎসব। স্টলে তৈরি হচ্ছে গরম গরম ভাজা পিঠে, সিদ্ধ পিঠে, ভাজা পিঠে, দুধ পিঠে, পুলি পিঠেসহ হরেক রকমের পিঠে। গরম গরম প্লেটে তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। আর সেই সুস্বাদু পিঠের স্বাদ গ্রহণ করছেন খাদ্য রসিকরা। রসনার পিঠার স্বাদ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভোজনরসিকরা। আরেকটু এগুলে দেখা মেলে মুরগির মাংসের একাধিক কাবাব। রেশমি কাবাব, হারিয়ালি কাবাব, টিক্কা কাবাব, মশলা কাবাব। কোনও স্টলে আবার মাছের একাধিক পদ। মিলেছে কম্বো প্যাকও। লাইভ পিজ্জার নিয়ে এসেছিল কোন কোন রেস্টুরেন্ট। ভাল সাড়াও পেয়েছে তাঁরা। ছিল বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় খাবার ওয়াফেল, পাস্তা, মেজবানি, বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি, ডেজার্ট, পেস্ট্রিসহ হাজার রকমের খাবার।

উৎসবে দেখা মেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সিরাজ মামার চটপটি। কথা আছে চবিতে সিরাজ মামার চটপটির স্বাদ নেয় নাই এমন প্রেমিকযুগল খুঁজে পাওয়া যাবে না। উৎসবে আরো দেখা মেলে দেশীয় ঐতিহ্যের মোয়া, বগুড়ার দই, সদ্বীপের দুধের ছানা দই, ব্রাজিলের বিখ্যাত কপিশফ এএমএ , ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, অ্যারাবিয়ান খাবার সহ দেশের সব ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত খাবার। শুধু খাবার না পাশাপাশি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রদর্শনী। এছাড়াও ক্যারিয়ার বিষয়ক বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুর্বণ সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন এডুকেশন কনস্টালটেন্সি। তিনদিনের আয়োজনে উৎসবের মঞ্চ ছিল বিভিন্ন পরিবেশনায় ভরপুর। ইনক্লুশন, এনটি ডট ও সেক্টর ফোর ব্যান্ডদলের মন মাতানো গান, সানি, লাভলী বিশ্বাস ও শান্তুনু দত্তের একক গান, প্রতিধ্বনি দলের বিটবক্স, রাজীব বসাকের যাদু, দৃষ্টি চট্টগ্রামের সৌজন্যে রম্য বিতর্ক, ডিজে ও নৃত্যসহ বিভিন্ন পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে ছিল বিভিন্ন ধরনের গেইম শো, যেখানে বিজয়ীরা পেয়েছেন হরেক রকমের উপহার। উৎসবে ছোটদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ছিল মিকি মাউস ও ডরোমিনের উপস্থিতি।

সমাপনি দিনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন বাসসের ব্যুরো প্রধান কলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের বোর্ড অব ট্রাস্টিও সদস্য খালেদ মাহমুদ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সুলতানা পারু, দি ইংলিশ একাডেমি প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ ইশরাফুল আলম, পরিচালক আকিবুল ইসলাম। হুইজ কমিউনিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ বকুলের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ফুড ফেস্টিভ্যাল সমন্বয়কারী কাজী আরফাত, ফুড মাস্টার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এডমিন রাইহান ইসলাম, এডমিন শাহদাত হোসেন।

এর আগে শুক্রবার বিকালে বেলুন উড়িয়ে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক-উত্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার জয়নুল আবেদিন টিটু। এসময় অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক বোরহানুল হাসান চৌধুরী

Nagad

ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, তরুণদের নিয়ে যেকোন ইতিবাচক আয়োজনকে আমরা স্বাগত জানাই। মেগাসিটি চট্টগ্রামে এই ফুড ফেস্টিভ্যাল ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এই আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।


ফুড ফেস্টিভ্যালে ঘুরতে আসা সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত আঁখি জানান, সময়ের কারণে অনেক সময় সব জায়গায় গিয়ে খাবারের স্বাদ নেওয়া হয় না। সেই সুযোগটা করে দিয়েছে চট্টগ্রাম ফুড ফেস্টিভ্যাল। এখানে একসাথে দেশি বিদেশী সব ধরনের খাবারের স্বাদ নিতে পারছি। একই সাথে জনপ্রিয় ব্যান্ডের কনসার্ট উপভোগ করছি। আনন্দ,আড্ডা, বন্ধুদের নিয়ে হইহুল্লোড়ে বেশ ভালো সময় কাটছে।

চট্টগ্রাম ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজকের পক্ষে হুইজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ বকুল বলেন, খাওয়া দাওয়ার সৌখিনতা আমরা চট্টগ্রামবাসীর বেশ আদি অভ্যাস। আমরা খেতে ও অন্যকে খাওয়াতে পছন্দ করি। সেদিক মাথায় রেখে বরাবরের মত মানসম্মত খাবারের রেস্টুরেন্টগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যাতে উৎসব আমেজে ভোজন করতে পারে।

উৎসবের সমন্বয়কারী কাজী আরফাত জানান, প্রতিবারে উৎসবে আমরা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করি। এবারের মেলায় বেশ সাড়া পেয়েছি। ছুটির দিনে মেলা হওয়ায় বেশ জমে উঠেছে।

ফুড মাস্টার গ্রুপের এডমিন রাইহান ইসলাম ও শাহদাত হোসেন জানান, এই ফেস্টিভ্যাল পুরো চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় ফুড ইভেন্ট। এই ধরনের আয়োজন আমাদের মধ্যে সম্প্রতির বন্ধন আরো দৃঢ় করে। ভবিষ্যতে আরো ভিন্ন পরিসরে ফুড ফেস্টিভ্যাল আয়োজিত হবে।

এই ফুড ফেষ্টিভ্যালে কো-স্পন্সর দি ইংলিশ একাডেমি, সেলফি পার্টনার মার্সেসাইড গ্লোবাল কলেজ, অনলাইন টেলিকাস্ট পার্টনার চিটাগং লাইভ, চট্টগ্রাম নেটওয়ার্ক টিভি এবং ফটোগ্রাফি পার্টনার চিটাগং কালার্স।

সারাদিন. ১৫ ফেব্রুয়ারি