ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ-সংযমের আহ্বান
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী নেতারা।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক নিহত হন। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বুধবার ভোররাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে অন্তত ৭০ জন নিহত হওয়ার দাবি করে দিল্লি, যদিও ইসলামাবাদ বলছে এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬ বেসামরিক নাগরিক এবং আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন। পাকিস্তান এ হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে উল্লেখ করে কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।


এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ঢল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করে জানান, “ওভাল অফিসে ঢোকার সময়ই আমরা খবরটি পেয়েছি। আশা করি, এটি দ্রুতই শেষ হবে।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া বিবৃতিতে তিনি জানান, তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে দুই দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাত বিশ্ব কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। তাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সামরিক সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। উভয় দেশকে শান্ত থাকা, সংযম প্রদর্শন এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল টিএফ১-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন,‘সন্ত্রাসবাদের অভিশাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ভারতের ইচ্ছা আমরা বুঝি। তবে সংযমই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে ভারত-পাকিস্তানকে সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাস করতে হবে।’
ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি। সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরপরাধদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে তারা কোথাও লুকাতে পারবে না।’
ভারতের এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’কে স্বাগত জানিয়েছেন।
ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।