পশ্চিমারা ইউক্রেনে কী পরিমান যুদ্ধাস্ত্র পাঠাচ্ছে?
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত এলাকা দখল করে নিয়েছে। তবে সম্প্রতি ইউক্রেন সেসব অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গা পুনর্দখল করেছে। বলা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে রুশ সৈন্যরা পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শহরগুলো থেকে পিছু হটে যাচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এইসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি, সেপ্টেম্বরের শুরুতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর রাশিয়ার কাছ থেকে ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্ত করেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দৃশ্যত ইউক্রেনের অগ্রাভিযানে গতি সঞ্চার হয়েছে এবং এসবই সম্ভব হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে কিয়েভকে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদি দেওয়ার কারণে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর এই সামরিক সহায়তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম এই যুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে।
সরাসরি সামরিক সাহায্য দেওয়ার বিচারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগস্ট মাস পর্যন্ত পাওয়া এই হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুত এই সাহায্যের পরিমাণ অন্য যেকোনও দেশের চাইতে কয়েক গুণ বেশি। তার পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেনের প্রতিবেশি দেশ পোল্যান্ড। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রিটেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ জানুয়ারি মাস থেকে ০৩ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ যেসব অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তার আর্থিক হিসাব নিচে উল্লেখ করা হলো।
যুক্তরাষ্ট্র ৮৭৯ কোটি ডলার; পোল্যান্ড ১৮৩ বিলিয়ন; ব্রিটেন ১৩৬ কোটি; কানাডা ৯৫ কোটি; জার্মানি ৬৭ কোটি; চেক প্রজাতন্ত্র ৩৫ কোটি; ডেনমার্ক ২৭ কোটি; লাটভিয়া ২৫ কোটি; এস্তোনিয়া ২৫ কোটি এবং অস্ট্রেলিয়া ২৪ কোটি ডলার। জার্মানির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কিল ইন্সটিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি’ থেকে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।
এরপরেও যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু সামরিক সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেছে। গত ২৪ আগস্টে ৩০০ কোটি ডলার, ০৯ সেপ্টেম্বরে আরও ৬৭.৫ কোটি ডলারের অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। ফলে সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১২৫০ কোটি ডলার।
ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও আগস্ট মাসে ইউক্রেনকে আরও প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আরও সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কি। তিনি বলেন, যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রতিরক্ষা খাতে ইউক্রেনের প্রতি মাসে ৫০০ কোটি ডলার খরচ হচ্ছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে কতোটা সাফল্য পাওয়া যাবে সেটা নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ-সরঞ্জামাদির ওপর। এর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, কোনও কিছু নষ্ট হয়ে গেলে সেটা চালু রাখার জন্য স্পেয়ার পার্টস এবং অন্যান্য সহযোগিতাও জরুরি। “কোনও একটি অস্ত্রই জয়ের জন্য একমাত্র সমাধান নয়” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি।
তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বেশ কয়েকটি অস্ত্র ইউক্রেন-রাশিয়ার এই যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যার একটি হচ্ছে দীর্ঘ-পাল্লার রকেট।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যাতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ধরে রাখতে পারে সেজন্য তাদের জরুরি-ভিত্তিতে প্রয়োজন অত্যাধুনিক কামান এবং গোলা-বারুদ।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনে অন্তত এক ডজন দীর্ঘ-পাল্লার রকেট লঞ্চার পাঠিয়েছে। ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশও কিয়েভে এই একই অস্ত্র পাঠাচ্ছে। তবে ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার অগ্রগতি ঠেকানোর জন্য এধরনের রকেট তাদের আরো বেশি সংখ্যায় প্রয়োজন।
এই অস্ত্রটির নাম হাইমার্স রকেট লঞ্চার সিস্টেম বা হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জন্য ১৯৯০-এর দশকে এই সিস্টেমটি তৈরি করা হয়। হাইমার্স রকেটের পাল্লা বিভিন্ন দূরত্বের। তবে গড় পাল্লা ৫০ মাইল। ওজন ১৬.২৫ টন। এটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলতে পারে। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫৩ মাইল। এটি পরিচালনা করতে প্রয়োজন তিনজন ক্রু। এরা হচ্ছেন গানার, চালক এবং লঞ্চার প্রধান।
সারাদিন/১২ সেপ্টেম্বর/এমবি