এসএসসির প্রশ্নফাঁস: কুড়িগ্রামে কেন্দ্র সচিবসহ আটক ৩

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতাকুড়িগ্রাম সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৪:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২

সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হওয়ার ঘটনায় নেহাল উদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মো: লুৎফর রহমানসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটক অপর দুইজন হলেন- ভুরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক মাওলানা জুবায়ের হোসেন।

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটকদের ভূরুঙ্গামারী থানা থেকে কুড়িগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২০ সেপেটম্বর) দিনগত রাতে তাদের আটক করা হয়। এজাহারে উল্লেখিত প্রধান চার আসামির মধ্যে স্কুলের ক্লার্ক আবু হানিফ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি’র স্থগিত চারটি বিষয়ের পরীক্ষা আগামী ১০ থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কামরুল ইসলাম বলেন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সাথে কথা বলে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরের পর চূড়ান্ত সময় জানানো হবে।

Nagad

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে ছয় বিষয়ে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এরপরই দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কথা জানানো হয়। ওই চার বিষয় হলো- গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান ও রসায়ন।

রুটিন অনুযায়ী গণিত বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার)। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) ২৪ সেপ্টেম্বর(শনিবার), কৃষিশিক্ষা ২৫ সেপ্টেম্বর (রোববার) ও রসায়ন (তত্ত্বীয়) বিষয়ের পরীক্ষা ২৬ সেপ্টেম্বর (সোমবার) হওয়ার কথা ছিল।

অপরদিকে, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কক্ষে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো: মাহফুজুল ইসলাম, দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

মামলার বাদী ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালিক চৌধুরী দায়েককৃত এজাহারে অভিযোগ করেছেন, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রশ্নফাঁসের অভিযোগেকেন্দ্র সচিবকে উপজেলা ইউএনওর উপস্থিতিতে জিঙ্গাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন যে, তার কাছে পরের একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রয়েছে। এরপর লুৎফর রহমানের কক্ষে বইয়ের তাক থেকে একটি কাপড়ের ব্যাগ পাওয়া যায়। এতে গণিত, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, কৃষি শিক্ষা ও পদার্থ বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র প্যাকেটবদ্ধ অবস্থায় ছিল। এর মধ্যে একটি প্যাকেট ছাড়া অন্য প্যাকেটগুলোর মুখ খোলা ছিল। এই মামলায় লুৎফর রহমান ছাড়াও সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল, জোবায়ের হোসেন ও ক্লার্ক আবু হানিফসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়। পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে আবু হানিফের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক কৌশলে ওই প্যাকেটগুলো কেন্দ্রে আনেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, মামলায় অভিযুক্ত আসামি ছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও কর্মকর্তার গাফিলতি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট কেউই রেহাই পাবেন না।

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মো: মাহফুজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদেরকে আটক করা হয়েছে। এই মামলাটি গুরত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সারাদিন/২২ সেপ্টেম্বর/এমবি