তথ্য প্রকাশ করায় শোকজ হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীরা, আতঙ্কে তারা

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২

ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা‌রা শোকজের মুখে পড়ছেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্নভা‌বে মান‌সিক চাপ সৃ‌ষ্টির পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে বদলি ও চাকরি থেকে বহিষ্কারের হুমকি।

এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মীরা। ভয় আর আতঙ্কে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন না। জানা গেছে, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এ ধরনের কাজ করছেন।

এদিকে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপনসহ অনৈতিক চর্চা করা হচ্ছে ব্যাংকে। আবার অনৈতিকভাবে সুবিধা দিয়ে দুরবস্থায় পড়ছে ব্যাংকখাত। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে। এ অনিয়মের সংবাদ গণমাধ্যমে এলেও বিরক্ত হচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তারা। তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগে শুনিনি। কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের আচরণ দেশ ও দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মকর্তাদের কেনো এমন নোটিশ দেওয়া হচ্ছে, তা আমি জানি না। তবে এটা সত্য কোনো ব্যাংকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তার তথ্য ওই ব্যাংক থেকে প্রকাশ হতে পারে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাওয়া, কয়েকটি ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপিঋণ আাড়াল ও ডলার কারসাজি নিয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো খবরের তথ্য কোথায় থেকে এলো এ নিয়ে ওই সংবাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের শোকজ করা হচ্ছে।

Nagad

এরই মধ্যে ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন, পরিদর্শন, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ও অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১০ কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে শাসানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কেলেঙ্কারির সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ডেপুটি গভর্নর হিসেবে যোগদানের পরই সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সময়ে দায়িত্বে নেই এমন সব বিভাগের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছেন তিনি। এতে করে অন্যান্য ডেপুটি গভর্নররা বিব্রত।

এছাড়া তার এমন একপেশি আচরণের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছেন না। কারণ তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানব সম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি) বিভাগের দায়িত্বে আছেন। কেউ কোনো কথা বললেই তার পদোন্নতি আটকে দেবেন বলে হুমকি দেন। এছাড়া তার নির্দেশেই কয়েকটি বিভাগে বিনা নোটিশে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আসার পর প্রথমে সাংবাদিকদের প্রবেশে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ওই বিটের সাংবাদিকরা গভর্নরের একটি প্রোগ্রাম বয়কট করেন। পরে সময়সীমা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন গভর্নর। সূত্র: দৈনিক আমাদের সময় ।