দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় ঘুমন্ত শিশুকে পুকুরে ছুড়ে মারলেন বাবা!
বগুড়ার শেরপুরে পারিবারিক কলহের জেরে ১৪ মাস বয়সী এক কন্যা শিশুকে পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক বাবার বিরুদ্ধে। ওই শিশুর নাম হুমায়রা খাতুন।
শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে পুকুর থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
জাকির হোসেন (৪৫) নামের ওই বাবা উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। পরে মরদেহ ও জাকিরকে পুলিশে দেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাত বছর আগে জাকিরের সাথে পার্শ্ববর্তী নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের নামা সিংড়াপাড়া গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম মোছা: জান্নাতি খাতুন। এরপর বাবার প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বারও মেয়ে হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন জাকির। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এই কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। এরই জেরে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে রাতের কোনও এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে পুকুরে ফেলে দেন জাকির।
জাকিরের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন, “মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি আমার মেয়ে খাটের ওপর নাই। পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। একইসাথে আমার বোন-দুলাই ভাইকে খবর দেই। প্রতিবেশীদেরও জানানো হয়। সবাই এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে চাপ দেন তারা। পরে আমার মেয়েটিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।”
জাকিরের ভায়রা সাইফুল ইসলাম বলেন, জাকিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোর রাতে পুকুরে নেমে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় শিশুটিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর জাকিরকে আটক করে থানায় খবর দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, “স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানকে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশনা দিয়েছি।”
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান বলেন, শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘাতক বাবা জাকিরকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সারাদিন/২৭ সেপ্টেম্বর/এমবি