‘এরপর আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা তোলার সুযোগ পাবেন না’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ছয়টি সংসদীয় আসনে উপ-নির্বাচন ও রংপুর সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের আমলে সবসময় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়- আশা করছি, এরপর আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা তোলার সুযোগ পাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে ছয়টি আসনে উপ-নির্বাচন হলো। একটিতে জাতীয় পার্টি জিতেছে। বিএনপির একজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সেখানে ভোটকরে নির্বাচিত হয়ে আজ সংসদে এসেছেন। তাছাড়া একটি আমরা দিয়েছিলাম রাশেদ খান মেননকে, সেখানে জাতীয় পার্টি জিতে এসেছে। হাসানুল হক ইনুকে দিয়েছি বগুড়ায়, সেটা তারা জিতে এসেছে। বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই সিটে নৌকা মার্কা জয়লাভ করেছে।’
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রংপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে কেউ অভিযোগ করতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই ইলেকশনে কিন্তু জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে। আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। কাজেই নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু হয়, অবাধ নিরপেক্ষ হয়, সেটা কিন্তু এসব নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’
অধিবেশনে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের এক লিখিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমদানিকৃত তরল গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাড়তি বিনিয়োগ করা হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে সমন্বয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমানের সমন্বয়ের কারণে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়ে থাকে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। প্রশ্ন উত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
প্রশ্নোত্তরে জানানো হয়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার দাম কিছুটা বাড়িয়েছে।
গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী সকল প্রকার জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ ছাড়া, জ্বালানি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয়, যেমন: বিমা খরচ, ঝুঁকি ব্যয়, ব্যাংক সুদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা মূল্যমান সমন্বয় করায় সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্যও অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি বাবদ দিতে হচ্ছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, চলমান কৃষি সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং রপ্তানিমুখী বিভিন্ন কলকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে স্পট মার্কেট হতে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করে উক্ত বর্ধিত চাহিদা পূরণ করতে হবে। সে কারণে সরকার অন্যান্য ভোক্তা শ্রেণিকে অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ও বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উক্ত খাতসমূহে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য স্পট মার্কেট হতে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা জানান, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় রোধ করার মাধ্যমে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিয়মিত ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, জরিমানা আদায়, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি।