পারমাণবিক যুগে বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রী বললেন আজ আনন্দ ও গর্বের দিন

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৩

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করা হয়ছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা গর্বের দিন, আনন্দের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সফল পরিণতি লাভ করছে। আমরা পরমাণুযুগে প্রবেশ করেছি।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় চার নেতা ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। একইভাবে রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি; যাঁরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশ গঠনে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের স্বপ্নের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাশিয়া ও বাংলাদেশ গত কয়েক বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর রাশিয়া সফরে গিয়ে এ প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়েছেন। সেখান থেকে এসে তিনি এ প্রকল্পের দায়িত্ব দেন পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে। ১৯৯৬ সালে আমরা জ্বালানি খাতকে এগিয়ে নিতে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছিলাম। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় বন্ধুপ্রতীম রাশিয়া আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছে। তাই রাশিয়ান ফেডারেশনের সবাই বিশেষ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।”

প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা পরমাণু শক্তি সম্পূর্ণ শান্তিপূ্র্ণ কাজে ব্যবহার করব। এ বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব। তাই এটি রক্ষায় আমরা আইন প্রণয়ন করেছি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জ্বালানি ইউরেনিয়াম রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে চালু হবে। ফেডারেশন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। তিনি উপস্থিত থেকে জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করায় বাংলাদেশ সম্মানিত বোধ করছে।”

পারমাণবিক শক্তি শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমরা বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছি। একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কর্তৃপক্ষ আইএইএ’র (আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি এজেন্সি) সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।’

Nagad

এ সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-রাশিয়ার বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।

অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ উপলক্ষ্যে আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ প্রকল্পে আমাদের দুই দেশের স্বার্থ জড়িত এবং যা পরস্পরের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও গভীর করেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের জন্য শ্রদ্ধা ও স্বার্থ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এরপর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাশিয়া কাজ করছে। বড় শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়া সহায়তা করেছে। গত বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে দুই দেশ।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রোসাটম বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কাজ শুরু করে। গবেষণার কাজ শেষ হলে ২০১৭ সালে চুল্লির প্রথম ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২৪ সালে ও দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ২০২৬ সালে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাওয়ার পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণে সক্ষম হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কার্বন নির্গমন করবে না, যা সামগ্রিক অর্থে একটি ভালো দিক।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ সশরীরে উপস্থিত থেকে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশের পক্ষে ইউরেনিয়াম গ্রহণ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠান ঘিরে সাজ সাজ রব ছিল পাবনাজুড়ে। রূপপুর প্রকল্প ও গ্রিন সিটি আবাসিক এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। প্রকল্প এলাকাজুড়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার জাতীয় পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন রঙের পতাকা শোভা পাচ্ছে।