ভোটের আগে নতুন গাড়ি পাচ্ছেন না ডিসি-ইউএনওরা

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩:০৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২৩

সংগৃহীত ছবি

সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন গাড়ি পাচ্ছেন না জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ৬১ জন ডিসি ও ২০০ জন ইউএনওর জন্য ২৬১টি নতুন জিপ কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।

সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, নির্বাচনের সময় সাধারণত ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংশ্লিষ্ট আসনে নির্বাচনের সব দায়িত্ব ও ক্ষমতা মূলত ডিসিদের হাতে থাকে। নির্বাচনের আগে তাদের বিশেষ উপহার দিতে চেয়েছিল সরকার। তবে বিষয়টি হঠাৎ বাতিল করায় তা সঠিক হয়নি বলে মনে করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

নির্বাচনের সময় সাধারণত ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমন ২৬১টি জন কর্মকর্তার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) বা জিপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছিল। যা গত ১১ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

এতে প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ধরে মোট ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দরপত্র ছাড়া সরাসরি গাড়িগুলো কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সেসবের জবাব দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাতে নতুন গাড়ি কেনার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব মনে হয়নি। ফলে নির্বাচনের আগে নতুন গাড়ি পাচ্ছেন না ডিসি-ইউএনওরা।

Nagad

মূলত ডলার-সংকটের কারণে সরকার নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বলে জানিয়েছেন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এদিকে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত স্থগিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, গাড়ি কেনার বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও সরকারের কৃচ্ছ্রতাসাধন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চাহিদাপত্রে বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহণ সেবা নিশ্চিত করতে এসব গাড়ির প্রয়োজন হবে। এমন এক সময়ে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে ডিসি-ইউএনওদের জন্য বড় লটে বিলাসবহুল গাড়ি চাওয়া হলো, যখন বৈশ্বিক অস্থিরতায় দেশেও অর্থনৈতিক সংকট চলছে। বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে সরকার নিজেই চলছে ধারকর্জের মাধ্যমে।

ব্যয় কমাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেট কার্যকরের দ্বিতীয় দিনেই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের অর্থ ব্যবহারে কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ এবং কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর আওতায় সরকারিভাবে সব ধরনের গাড়ি, বিমান ও জাহাজ কেনাকাটা বন্ধ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ভূমি খাতের অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দ অর্থসহ আবাসিক, অনাবাসিক, অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দ অর্থ খরচ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারি চাকরিজীবীদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, কর্মশালা, সেমিনারে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এর আগে, গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব গাড়ি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।