ঈদ যাত্রা: ছুটিতে বাড়ি বা বেড়াতে যাচ্ছেন ? খেয়াল রাখুন এসব বিষয়ে
পবিত্র ঈদুল আজহার-ঈদকে সামনে রেখে সবাই নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরেন। অথবা ভ্রমণের জন্য এই ঈদের ছুটিকে বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ ভ্রমণের জন্য এ সময়ই বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। যে পরিকল্পনাই করেন না কেন অবশ্যই ঈদ যাত্রায় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। না হলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে ঈদটাই মাটি হয়ে যেতে পারে। পরিকল্পনা করার সময় যদি একটু খেয়ালি হলে ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক ও সুন্দর হয়ে ওঠে।
প্রথমত:
প্রথমেই জানতে হবে কোথায় যাবেন? এজন্য কতদিন, বাজেট কত, কেমন স্থান পছন্দ, ভ্রমণসঙ্গী কতজন, ভ্রমণস্থানের প্রাপ্ত সুবিধার বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। তারপর স্থান নির্বাচন করলে পরিপূর্ণ মানসিক তৃপ্তি নিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন। এ সময় বর্ষাকাল হলে পাহাড়, সবুজ বন, হাওড়, বিল, ঝরনা দেখতে যেতে পারেন। এ সময়ে নদী ও সমুদ্র উত্তাল থাকে, আবহাওয়াও থাকে বৈরী। তাই এসব অঞ্চল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
দ্বিতীয়ত:
ভ্রমণে কোন পথে যাবেন এটি নির্বাচন করতে হবে। তবে যে পরিবহনই ব্যবহার করেন না কেন, সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য রাখবেন আপনার জীবনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতি। রাতে থাকতে চাইলে আগেই স্থান ঠিক করে নেওয়া ভালো। ভ্রমণের আবাসস্থল হতে হবে যথাসম্ভব ভালো। সারাদিন দৌড়-ঝাঁপ করে শরীর এবং মনকে বিশ্রাম দিতে ভালো আবাসস্থল অবশ্যই জরুরি।
তৃতীয়য়ত:
কোন স্যুটকেস নেব, এটা দিয়েই শুরু হয় ভ্রমণের জিনিস গোছানোর কাজ। দূরের ভ্রমণ হলে বাইরে থেকে শক্ত আর আকারে বড়, এমন ব্যাগ বেছে নিন। কাছের জায়গায় ভ্রমণ হলে ছোট ব্যাগই যথেষ্ট। তবে যে ধরনের ব্যাগই নেন না কেন, কেনার আগে পরীক্ষা করে দেখুন যে এর চাকা মসৃণভাবে ঘুরছে কি না, আর হ্যান্ডেলের দৈর্ঘ্য আপনার উচ্চতার সঙ্গে মানানসই কি না।
চতুর্থত:
ভ্রমণে যে জিনিসগুলো না নিলেই নয়, তেমন একটি তালিকা তৈরি করে রাখুন। মূল তালিকার সঙ্গে পরে যোগ-বিয়োগ করা যাবে। ব্যাগ গোছানোর আগে সব জিনিস আগে এক জায়গায় বিছিয়ে নিন। ভারী জিনিসগুলো আগে ঢোকান। স্যুটকেসটা যখন দাঁড়িয়ে থাকবে, সেটা যেন থাকে নিচের দিকে। ওপরের অংশেও যেন কিছু থাকে। তাহলে ভারসাম্য থাকবে ভালো।
পঞ্চমত:
কী কী পোশাক লাগতে পারে, সেগুলোর বাইরে সর্বাধিক একটি কিংবা দুটি জামা বেশি নিতে পারেন। স্থান, পরিবেশ ও সংস্কৃতি মাথায় রেখে পোশাক পরা উচিত। যে এলাকায় বেড়াতে যাবেন, সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে পোশাক পরুন। যদি বিয়ের দাওয়াতে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রেও মিলিয়ে–মিশিয়ে পরতে পারবেন এমন পোশাক নিন। জুতা বাছুন ভেবেচিন্তে। হাঁটাহাঁটির বিষয় থাকলে কেডস নেওয়া বাধ্যতামূলক। এর বাইরে এমন স্যান্ডেল নিন যেটা ক্যাজুয়াল বা আনুষ্ঠানিক সব জায়গায় মানিয়ে যাবে। শিশু আরাম পাবে, এমন পোশাক বেছে নিন। একমাত্র শিশুর জন্য বাড়তি পোশাক নিন। সুইমিংপুলে নামার ইচ্ছা থাকলে আলাদা পোশাক ও অনুষঙ্গ নিয়ে নিন। এছাড়া টুথপিক, কটনবাড, সেফটিপিন থেকে শুরু করে ফার্স্ট এইড বক্স, এমনকি সসপ্যান বা চা-কফি মেকারও নিতে পারেন। তবে লাগেজ যেন বেশি ভারী না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ষষ্ঠত:
খাবার অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত কি না, তা যাচাই করে নেওয়া উচিত। মোড়কজাত খাবার কেনার ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কি না খেয়াল রাখবেন। এ সময় সেদ্ধ এবং গরম খাবার খাওয়া উচিত। ফাস্টফুড, বেভারেজ, ফ্লেভারড জুস, চিপস ইত্যাদি পরিহার করুন। বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পরিমাণে কম কিন্তু ঘনঘন পানি পান করুন।
সপ্তম:
জুতা নেওয়ার সময় কোনো জায়গা নষ্ট করা যাবে না। জুতার ভেতরের অংশ মোজা, ছোট ছোট জিনিস দিয়ে ভরে ফেলুন। তবে জুতাটা নোংরা থাকলে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ফেলুন। কেউ কেউ কাপড় ভাঁজ করে নেন, কেউ আবার রোল করে গুটিয়ে নেন। কিন্তু একটি স্যুটকেস প্যাক করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো দুটিরই মিশ্রণ। শ্যাম্পু, সাবান লোশন সব সময় ছোট বোতলে ভরে নিন।
অষ্টম:
প্রয়োজনীয় ওষুধ: ব্যান্ডেজ, প্যারাসিটামল, পেট খারাপের ওষুধ, হাত স্যানিটাইজার, অ্যালার্জির ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন সঙ্গে রাখুন। শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সবার আগে ব্যাগে ঢোকান।
নবম:
সবার আগে ব্যাগে রাখুন সকেট: মোবাইল বা প্রয়োজনীয় গ্যাজেটগুলো চার্জ দেওয়ার জন্য এটি আবশ্যক। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে দুই পিন-তিন পিনের ঝামেলা থাকতেই পারে। হোটেল থেকে টুথব্রাশ, টুথপেস্ট দেবে কি না, জেনে নিন। তাহলে এগুলো বাড়তি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেকোনো ভ্রমণেই সানস্ক্রিন আবশ্যক। শিশুদের খেলনা নেওয়ার সময় তাঁদের মতামত জেনে নিতে হবে। তবে দুই থেকে তিনটির বেশি না নেওয়াই ভালো। ব্যাগে জায়গা কম লাগবে, এমন খেলনা নিতে উৎসাহিত করুন। স্ন্যাক্সজাতীয় খাওয়া সঙ্গে রাখুন। চেষ্টা করুন ফল বা স্যান্ডউইচ রাখতে। ব্যাটারিচালিত হ্যান্ডফ্যান, রোদচশমা, টুপি নিতে ভুলবেন না।
দশম:
ব্যাগে সব সময় কয়েকটা জিনিস রাখা খুব ভালো। জিনিসগুলো হলো প্রাইমার, কনসিলার, ছোট কমপ্যাক্ট পাউডার, কাজল, লিপস্টিক, ব্লাশন, ময়েশ্চারাইজার, লোশন, পারফিউম, চিরুনি, ওয়েট টিস্যু, লিপবাম, সানস্ক্রিন ও রোদচশমা। হালকা বা গাঢ় রঙের যেকোনো একটা বা দুটি লিপস্টিক সব সময় ব্যাগে রাখতে পারেন, যাতে যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ছেলেদের জন্যও বডি স্প্রে, ক্রিম নিয়ে নিন।
এগারো:
আর আমি একা ভ্রমণ করলে, পাশের যাত্রী অচেনা বা অজানা হলে, কোনো খাবারদাবার বা কোনো কিছু দিলে নেওয়া যাবে না।। কারণ, এখন কিন্তু অনেক ক্রাইম বেড়ে গেছে। আপনি হয়তো শুনেছেন অজ্ঞান পার্টি বা মলম পার্টির নাম। পাশের যাত্রীর কাছ থেকে কিছু নেওয়া যে বিপজ্জনক সেটি মাথায় রাখতে হবে।