দীর্ঘমেয়াদী মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ:

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার কার্যকারিতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়

নাজমুন নাহারনাজমুন নাহার
প্রকাশিত: ৬:৪১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৪

দীর্ঘদিন ধরে চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রায় ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। সুদহার ও টাকার সরবরাহ পরিবর্তনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের থাকলেও, ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সুদহারের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

একইভাবে, ডলারের মূল্যও ১১৭ টাকায় ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কৃত্রিমভাবে ডলারের মূল্য ধরে রাখা এবং ছয়-নয় সুদহার চালু রাখাকে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়।

রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা আরও তীব্রতর হয়েছে। এই লক্ষ্যে, প্রশিক্ষিত জনশক্তিকে বিদেশে পাঠানো এবং কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, আন্তঃদেশীয় সম্পর্কের উন্নতি করার মাধ্যমে বেকার এবং শিক্ষিত জনবলকে কাজে লাগানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, যা হুন্ডিওয়ালাদের দৌরাত্ম্য ও ব্যাংকিং চ্যানেলের দুর্বলতার কারণে ঘটছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ পুনরুদ্ধারে ব্যাংকগুলোর আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করা জরুরি।

আমাদের রফতানির বাজার মূলত ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলেও, কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চা, হিমায়িত চিংড়ি এবং বিভিন্ন ফল ও সবজির রফতানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশের মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় রাখার জন্য কৃষি উন্নয়ন ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে আমদানি ঋণপত্রের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ অর্থনীতি বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেবল মুদ্রানীতি যথেষ্ট নয়, বরং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আরও জোর দিতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থা ও বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে, মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে বাজার ব্যবস্থাপনাকে মুক্ত রাখতে হবে এবং গ্রাম ও শহরের মধ্যে পণ্য মূল্যের ব্যবধান কমাতে হবে।

Nagad

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে একটি বড় বাধা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কার্যকর এবং সমন্বিত নীতি গ্রহণ করতে হবে, তা না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা হতে পারে, যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।