‘কৈশোরকালীন চাহিদায় মনো-সামাজিক যত্নে গড়ে উঠবে আনন্দময় নিরাপদ কৈশোর’

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনমোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
প্রকাশিত: ৯:১৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৪

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ কিশোর-কিশোরী। কৈশোরকালীন সময়ে একজন কিশোর বা কিশোরীর জীবনে মানসিক, শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। এই বয়সের ছেলে-মেয়ে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি থাকে। প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক ইত্যাদির মতো বিষয়ে তারা অবগত নন। এ সময় কিছুটা মানসিক টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে।

কিশোররা এ সময় নিজেকে স্বাধীন ভাবে, বাবা-মায়ের খবরদারি পছন্দ করে না। নিজে নিজে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে চায় এবং কখনও বাবা-মায়ের সঙ্গে রূঢ় আচরণও করে। হরমোনের পরিবর্তনসহ মানসিক বিকাশের পর্যায় অতিক্রম করতে করতে আবেগের ঝড় বয়ে যায় তাদের মনে। নিজের শারীরিক আর মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার চারপাশও বদলাতে থাকে। নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে তারা এ বয়সে জানতে শুরু করে এবং শৈশবের ধারণার সঙ্গে তা না মিললে মনের মধ্যে জন্ম নেয় ধন্ধ। নিজেদের শারীরিক পরিবর্তনও কিশোর-কিশোরীকে কিছুটা অন্তর্মুখী করে তোলে। এ সময়টিতে একজন কিশোর বা কিশোরী শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি তার জ্ঞান, মনো সামাজিক আর নৈতিকতা বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলো অতিক্রম করে। এ সময় মনের যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরি।

কৈশোরকালীন যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়, সেই বিষয়টি সম্পর্কে শুধু জানলেই হবে না, তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সঠিকভাবে বুঝতে পারলেই কেবল তাদেরকে খাপ-খাওয়ানোর ব্যাপারে সাহায্য করা সম্ভব হবে। এই অবস্থা বোঝার সহজ ও কার্যকর উপায় হল, কৈশোরকালে নিজেরা কি ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন তা অর্থাৎ ঐ সময়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা মনে করার চেষ্টা করা। নিজেদের কৈশোরকালীন অবস্থার সাথে কিশোর-কিশোরীদের অবস্থাকে মেলানোর চেষ্টা করলে তাদের অবস্থা বোঝা সহজ হয় এবং এক ধরনের সহমর্মিতা গড়ে উঠে। এ ছাড়া এই বয়সীদের পর্যবেক্ষণ করে, এই বয়সের সাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গড়ে বা অন্যান্যদের থেকে জেনে নিয়েও এই বয়সীদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে।

কিশোর-কিশোরীদের অবস্থা শুধু বুঝলেই হবে না বরং তাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই স্বীকৃতি দেবার ব্যাপারটি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে হতে হবে। যেমন কাজ করা অথবা কাজ করার দায়িত্ব নেবার ইচ্ছাকে প্রশংসা করা। এই সময় তারা তার পরিবারের ব্যাপারে যদি কোন দায়িত্ব নিতে চায় বা কোন ধরনের কাজ করে তবে তাঁকে বাধা না দিয়ে বরং যথেষ্ট প্রশংসা করতে হবে। ঠিকমত করতে না পারলেও তাকে নিরুৎসাহিত না করে বরং সাহায্য করতে হবে। এর ফলে সে নিজেকে পরিবারের একজন বলে মনে করবে যা পরিবারের অন্যান্যদের সাথে সহযোগিতা করার মনোভাব বাড়বে।

পরিবারের বিভিন্ন বিষয় যেমন সাজান গোছানোর কাজ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ প্রভৃতি ব্যাপারে পরিবারের সবার সাথে বসে আলাপ আলোচনা করার সময় কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে নিতে হবে। তাদের মত প্রকাশের সুযোগ নিতে হবে। শুধু মত প্রকাশের সুযোগই নয় বরং যেসব ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে গ্রহণ করা যায় সেক্ষেত্রে তা গ্রহণ করতে হবে। কোন ক্ষেত্রে পুরোপুরি গ্রহণ করা সম্ভব না হলে আলোচনা করে কিছুটা হলেও তাদের মত গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়েটি নিজেকে পরিবারের একজন বলে মনে করবে। এই বয়সে নিজস্ব সত্তার বিকাশ হয় বলে কিশোর-কিশোরীরা মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকে। এই অবস্থার উন্নতির জন্য তাদেরকে সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত করা প্রয়োজন। সৃজনশীল অনেক কাজই করতে পারে যেমন, ছবি আঁকা, খেলনা বানানোর কাজ যা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক দ্বন্দ্বের উন্নতি ঘটাবে। অন্যান্যদের চোখে কিশোর- কিশোরীদের গ্রহণযোগ্য করবে, আবার ভাল কাজের মাধ্যমে তাদের গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠবে যা নিজস্ব সত্তাকে খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।

সারা পৃথিবী একটি অসুন্দরতম সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। মা-বাবা কিংবা অভিভাবক হিসেবে, বর্তমান সময়ে, পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় সন্তানদেরকে অধিক সময় দেয়ার মাধ্যমে কিশোর কিশোরীদের জীবন দক্ষতা অর্জনের উপাদান সমূহ অর্জনে সফলতা আনতে পারব এই বিশ্বাস আমার সবসময়ের। আনন্দময় নিরাপদ কৈশোর হউক সেটাই আমাদের চাওয়া।

Nagad

লেখক: সমাজকর্মী (social Worker)