বনশ্রীতে নারী সাংবাদিকের ওপর হামলা, প্রধান অভিযুক্তসহ গ্রেপ্তার ৩

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২৫

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় দৈনিক নিউ এজের সাংবাদিক রাফিয়া তামান্নার ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বুধবার (২ এপ্রিল) গভীর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দুজন হলেন রাইসুল ইসলাম (২১) ও কাউসার হোসেন (২১)।

র‍্যাব-৩-এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সনদ বড়ুয়া জানিয়েছেন, রাজধানীর রামপুরা এলাকায় যৌন হয়রানির ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। র‌্যাব-৩ বিষয়টি নজরে এনে তাৎক্ষণিকভাবে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার ভিত্তিতে অভিযান চালায়।

গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানকে রামপুরার মেরাদিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রমনার বেইলি রোড এলাকা থেকে রাইসুল ইসলাম এবং শ্যামপুরের গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে কাউসার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাংবাদিক রাফিয়া তামান্নার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

Nagad

রামপুরা থানার ওসি আতাউর রহমান আকন্দ জানান, রাফিয়া তার ভাই ও এক বন্ধুকে নিয়ে দোকানে জুস খেতে গিয়েছিলেন। তখন সেখানে থাকা তিন তরুণ রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে কটূক্তি করে, যার প্রতিবাদ করলে তারা প্রথমে রাফিয়ার ভাইকে মারধর করে এবং পরে রাফিয়াকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

রাফিয়া তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নিজের বাসার সামনে নিরাপদ না? আমাকে এক দোকানের (বনশ্রী- ই ব্লক ৩ নং রোডের শেশে, ফরাজী এভিনিউ) ভেতর থেকে টিজ করে পাশে এসে দাঁড়ানোয় আমার ভাই ছেলেগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। আমাকে টিজ করা তাদের অধিকার ধরনের ভাব নিয়ে উল্টা আমার ভাইকেই বলতে থাকে ওদের সামনে এসে কেন দাঁড়াল, কেন তাকাচ্ছে। আমার ভাই বললো আমার বোনকে উত্যক্ত করল দাঁড়ায় দেখব না কি, এরপর আমার ভাইকে বাড়ি কই বাড়ি যাই বলে এগ্রেসিভ অঙ্গভঙ্গি শুরু করে, সম্ভবত এলাকার মাস্তানদের পালিত মাস্তান এরা। এরপর আমার ভাইকে মারা শুরু করে, আমি ওদের টান দিয়ে আমার ভাইকে উঠাইতে যাই, এরমধ্যে সবুজ জামা পরা ছেলেটা এসে পেছন থেকে আমার চুল টান দিয়ে বুকে হাত দিয়ে হ্যাচকা টান দেয়, কালো গেঞ্জির ছেলেটা লাথি দেয়, এরপর আমি যা হয় কাঁদতে কাঁদতে চিল্লাতে থাকি সবাই দেখতেসেন কীভাবে আমার গায়ে বারবার হাত দিচ্ছে। এর মধ্যে সবুজ গেঞ্জির ছেলে এসে বলে আমি সাংবাদিক কাকে ডাকবি কোন পুলিশ ডাকবি ডাক, আমার নাম বল। আমার সাথে থাকা মাশফিক ব্যস্ত ছিল আমাকে ধরে রাখতেই, এরমধ্যে ও বলে আপনি কোথাকার সাংবাদিক, আমি ডেইলি স্টারের, ওকেও লাথি দেয় ছেলেটা। আমার গায়ে ব্যথা। তবে আমার ভাইয়েরটা জানি না, বোনকে বাঁচাতে গিয়ে আমাদেরই বাসার সামনের গলিতে এসব দুই টাকার মাস্তানদের ইচ্ছামত মার খেল। সবার দাঁড়ায় থাকা দেখে পালটা দুই একটা আমিও দেই, আফসোস বেশি দিতে পারিনাই।’

‘আমি যখন কাঁদতে কাঁদতে চিল্লাতে চিল্লাতে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যাচ্ছিল, এই ছেলে দুইটা বারবার মুখ কুচকে বলেই যাচ্ছিল, ‘হ রেপ করসি আমরা’।

হামলার ঘটনায় রাফিয়া থানায় সোয়েব রহমান জিশানকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলায় আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

রামপুরা থানা ও র‌্যাব জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।