কলাপাড়ায় ৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভয়াবহ বেড সংকট, চিকিৎসা মেঝেতে

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :
প্রকাশিত: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২

কলাপাড়া হাসপাতালে ৫০শয্যার হাসপাতালে ৩০শয্যার সেবাও নেই এ হাসপাতালে। এভাবে সবসময়ই বেড সংকটে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের মেঝেতে। ৩ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল কলাপাড়া এ হাসপাতালটি। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট জ্বর, ডায়রিয়ার প্রকোপ, ঘনঘন বমি ও পাতলা পায়খানা, মারামারি, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি দিন অসুস্থ রোগীরা এখানে ভর্তি হন, কিন্তু বেড সমস্যার কারণে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে এখন মেঝেতে।

বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন রোগীরা, এসে বেড না পাওয়ায় হাসপাতালের মেঝেতে, বারান্দায় শুয়ে-বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ৫০ বেডের স্থানে শতাধিক রোগীর চাপে হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অনেকে বেড ও মেঝেতে জায়গায় না পেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যায়। প্রয়োজনীয় ঔষধ, খাবার সরবরাহ পাচ্ছেনা অনেক রোগী। এ ধরণের নড়বড়ে অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের বহি:বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ রোগীকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ৫০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হয় অনেকগুণ বেশি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ শূন্য পদগুলো হলো- জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক, কান, গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোঃ), জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), পরিসংখ্যানবিদ-১, স্টোর কিপার-১, প্যাথলজিস্ট-১, ডেন্টাল সার্জন-১, মেডিকেল অফিসার (ইউঃ আয়ুঃ হোমিও), উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিঃকর্মকর্তা-১, মেডিকেল টেক: (ফার্মা:)-১, মেডিকেল টেক: (ল্যাব:)-২, মেডিকেল টেক: (ফিজিওঃ)-১, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক-২, টিকিট ক্লার্ক-১, জুনিয়র মেকানিক-১, ওটি বয়-১, আয়া-১, নিরাপওা প্রহরী -১, কুক-২, সুইপার-৩, যক্ষ্মা কুণ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারী-১, স্বাস্থ্য পরিদর্শক-২, স্বাস্থ্য সহকারী-১৬, সি এইচ, সি পি-৩, এম এল এস, এস-৩।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান ও তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ৩১ শয্যার এ হাসপাতালকে ৫০শয্যায় উন্নীত করা হয়। ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভায় প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ এবং পাশের তালতলী-রাঙ্গাবালী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ৩১ শয্যার এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন গড়ে আউট ডোড় -ইনডোর ও জরুরী বিভাগ থেকে ২০০-২৫০ রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকে। হাসপাতালে ৫০ টি বেড থাকলেও ১৯টি পুরুষের, মহিলা ২১(এর মধ্যে ৭টি ই ও সি), শিশু ১০টি।

মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া দিলারা বেগম জানান, নিজের শরীরে অনেক দিন ধরে জ্বর জ্বর এজন্য ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার বলছে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিন। বেড না পাওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছি, গরিব মানুষ মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হবে। কিন্তু দুর্গন্ধ ও মশা বেশি। এছাড়া ওষুধ কিনতে হয় বাহির থেকে। খুব কষ্ট হয়। একই সমস্যার কথা বলেন হাসপাতালে ভর্তি কৃত বেড ও মেঝেতে চিকিৎসা নেয়া অনেক রোগীরা।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার জানান, হাসপাতালে সীমিত বেডের বিপরীতে অনেক বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় অনেকে মেঝেতে জায়গা নিয়ে সেবা নিচ্ছেন। এ এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এরিয়া। ২৫০ রোগী সবসময় চিকিৎসা নিয়ে থাকে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চলছে এ অ লে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পর্যটন এলাকা হিসেবে সবসময় লোক সমাগম থাকে তাদের কিছু হলে এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হয়েছে কিন্তু কোন ফল হচ্ছেনা।

পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, কলাপাড়া হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়, এজন্য এখানে ১০০শযা হাসপাতাল দরকার। বর্তমানে একটি উপজেলা ১০০শয্যার কাজ করছি, পর্যায়ক্রমে কলাপাড়াকে করা হবে। সংসদ সদস্য ডিউলেটার দিলে ও সংসদে এ নিয়ে আলোচনা করতো তাহলে এটি কার্যকর হতো।

Nagad