‘আমার শঙ্কা হচ্ছে যে, সারা বিশ্বেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সংকট এখন যেটা দেখছেন, হয়তো সামনের বছর আরও বেশি সংকট দেখা দেবে। এটা সারা বিশ্বব্যাপী। আমার শঙ্কা হচ্ছে যে, সারা বিশ্বেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক চরম দুরবস্থা দেখা দেবে। সেই ক্ষেত্রে আমি আগে থেকেই আমাদের সবাইকে বলে রেখেছি, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, ফসল ফলাও, নিজের খাবার নিজে ব্যবস্থা করো। নিজেরটা আগে আমরা নিজে করে রাখি, যেন আমাদের কারও মুখাপেক্ষী না হতে হয়।’

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের এখনও এক বছরেরও বেশি সময় বাকি। আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসুক। কোনো দল নির্বাচনে না এলে সেটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। এ জন্য সংবিধান তো বন্ধ থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে কে থাকবে সেটা সময় বলে দেবে। আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে, আমাদের দরজা খোলা। জনগণ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাইলে আমার বিশ্বাস তারা আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। আর না চাইলে কিছু করার নেই। এটা জনগণের ইচ্ছা।

পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তবুও তো আমরা চালাচ্ছি, ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের যে অবস্থাটা—সেটা একবার চিন্তা করে দেখেন, কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা প্রণোদনা দিয়েছি, গ্রামে গ্রামে অর্থ সরবরাহ করেছি, সাধারণ মানুষকে নগদ অর্থ দিয়েছি, আমরা ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছি, শ্রমিকদের বেতন সরাসরি দিয়ে দিয়েছি, কৃষকদের সব ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি। সার থেকে শুরু করে কৃষি উপকরণ, পৃথিবীর যেখানে পাচ্ছি নিয়ে এসে সরবরাহ করে যাচ্ছি। আমরা কোনো দিকে এতটুকু শিথিলতা দেখাচ্ছি না।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভারত ইতিবাচক জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত সফরে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গারা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশকে নষ্ট করছে। তারা নিজেদের মধ্যেও অস্ত্রবাজি ও সংঘাত করছে। সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা ভারতকে বলেছি। ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মিয়ানমারকে নিয়ে।

Nagad

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আসবে। এতে করে তেল পরিবহনের খরচ অনেকটা কমে যাবে।

তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় ১৩১ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১২৬ এবং ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার পাইপলাইন ভারত সরকারের অর্থায়নে নির্মাণকাজ চলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কম নয়। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। আমাদের চারদিকে ভারত। সেই দেশ থেকে ব্যবসা, বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ, সব বিষয়ে সহযোগিতা আমরা পাই। এমনকি পাইপ লাইনে করে তেল নিয়ে এসেছি। একেবারে শূন্য হাতে এসেছি, বলা যাবে না।

উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠক হয়। এ ছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গেও পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।

সফরে যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে- অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে পানি প্রত্যাহার, ভারতে বাংলাদেশের রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের আইটি সিস্টেমে ভারতের সহযোগিতা, ভারতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা, মহাকাশপ্রযুক্তিতে সহযোগিতা এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা।