আশুলিয়ায় তাজরীন ট্রেজেডি’র ১০ বছর: বিচার মেলেনি আজও

সাভার প্রতিনিধি:সাভার প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২২

বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় বিভীষিকায় কালো অধ্যায়ের এক নাম তাজনীন ট্রেজেডি। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর এই পোশাক কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ১১৩জন শ্রমিক। এই ঘটনায় আহত হন আরও প্রায় দুই শতাধিকেরও বেশি শ্রমিক। সেই দিনের ভয়ংকর স্মৃতি মনে হলে আজও আতংকে আঁতকে ওঠে অনেকেই। ওই দিনের মানুষ পোড়া গন্ধ এখনো ভুলতে পারেনা হাজারও শ্রমিক।

ভয়াবহ ওই ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলা দায়েরের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচারকাজ। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, খুব দ্রুতই শেষ হবে বিচারকাজ।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৮ মে মামলাটিতে দুজন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। তারা হলেন, পোশাক শ্রমিক হালিমা খাতুন ও সুপারভাইজার সিরাজুল ইসলাম। এরপর থেকে আর কোনো সাক্ষী আদালতে আসেননি। গত ২৪ অক্টোবর এ মামলার অভিযোগপত্রের ৯৮ থেকে ১০৩ সাক্ষীর প্রতি সমন ইস্যু করেন আদালত। আগামী ১ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর একেএম শাহ নেওয়াজ জানান, মামলার যারা সাক্ষী অধিকাংশই তাজরীন ফ্যাশনের কর্মী। অগ্নিকাণ্ডের পর অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। স্থায়ী ঠিকানাও নেই। এ কারণে সাক্ষী খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হচ্ছে।

মামলার এই ধীরগতি নিয়ে অসন্তুষ্ট আসামিপক্ষও। আসামিপক্ষের আইনজীবী রোকেয়া বেগম ও ফরিদ হোসেন পলক বলেন, ‘মামলায় নিয়মিত সাক্ষী হচ্ছে না। সাক্ষী আসুক বা না আসুক আসামিদের তো নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। এতে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, মামলার অনেক আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।’

তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেনের আইনজীবী হেলেনা পারভীন বলেন, ‘তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। কারণ তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তার দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করছে। তারপরও তাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

Nagad

২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ঘটনার এক বছর ২৮ দিন পর আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, কারখানা ভবনটি ইমারত নির্মাণ আইন মেনে করা হয়নি। শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। তিনটি সিঁড়ির মধ্যে দুটি নিচতলার গুদামের ভেতরে এসে শেষ হয়েছে। ওই গুদামে আগুন লাগার পর শ্রমিকেরা বের হতে চাইলে কারখানার ম্যানেজার শ্রমিকদের বাধা দিয়ে বলেন, আগুন লাগেনি। অগ্নিনির্বাপণের মহড়া চলছে। তিনি বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন-তাজরীন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার, প্রাতষ্ঠানটির লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম লাভলু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন ও প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহীদুজ্জামান দুলাল, প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু, নিরাপত্তারক্ষী রানা ওরফে আনারুল। তবে এই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আল আমিন, রানা ওরফে আনারুল, শামীম ও মোবারক হোসেন পলাতক রয়েছে। অপর আসামিরা জামিনে রয়েছেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১২ পোশাক শ্রমিক মারা যান। আহত হন ১০৪ জন। গার্মেন্টস কারখানাটিতে এক হাজার ১৬৩ শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন।

ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানায় এসআই খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের নামে একটি মামলা করেন। একই ঘটনায় ২০১৩ সালের ২৯ মে নিহত রেহানা বেগমের ভাই আবদুল মতিন ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাত ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলাটি আদালত তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।