তিস্তার ধুধু বালুচরে ফসল চাষাবাদে বাড়তি খরচে দুশ্চিন্তায় কৃষক
প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়া তিস্তার বুক চিরে জেগে উঠেছে শতাধিক চর। কয়েক দফা বন্যার পানিতে ভেসে আসা পলি পরে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেছে এসব চরাঞ্চল। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের ক্ষতি কাটিয়ে পলিযুক্ত চরে এখন চাষ হচ্ছে আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, পেয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। তবে নদীতে পানি স্বল্পতা থাকায় চিন্তার ভাজ কৃষকের কপালে। তিস্তার বুক চিরে জেগে ওঠা চরে ডিজেল চালিত পানির পাম্প (শ্যালো) বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করে চাষাবাদ করছেন চাষিরা। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা ধুধু বালু চরে কৃষকের এই সেচ নির্ভর চাষাবাদে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে করে বাড়তি খরচে দুশ্চিন্তায় কৃষক।
লালমনিরহাট কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে জেলার ৫ টি উপজেলায় জেগে ওঠা জমির পরিমান ১০ হাজার হেক্টর। এ বছর চাষাবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। তবে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জেগে ওঠা চরের বৃহৎ অংশই চাষাবাদের বাহিরে রয়েছে এখনো। আর চাষাবাদ কৃত জমিতেও নদীতে পানি সংকট থাকায় কৃষকরা শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছে।


বালুময় জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারো শুকিয়ে যাওয়ায় খরচ মিটিয়ে লাভবান হওয়া নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা। নদীটি প্রায় পানিশূন্য থাকায় কৃষকরা আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, যদি নদীতে পানি থাকত তাহলে সোনালী ফসল ফলাতে তাদের কোন বেগ পেতে হত না। পানি না থাকায় তাদের এখন মরণদশা। ডিজেল কিনে ফসল ফলাতে তাদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক মাযাহার আলী(৫৫) তিস্তা সড়ক সেতুর পাশে তিস্তা নদীর বুকে ধুধু বালুচরে আলু ও লাল শাক করেছেন। আলু খেতের পানির দরকার হওয়ায় তিনি নদীর বুকে শ্যালো মেশিন বসিয়েছেন।ফসলে সেচ পদ্ধতির বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, কয়েকজন কৃষক মিলে আমরা একটি শ্যালো মেশিন থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করে ধুধু বালু চরে চাষাবাদ করছি। উপজেলার খুনিয়াগাছ হরিনচরের কৃষক আমিনুর রহমান (৫০) বলেন, তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে ওঠা চরে নানা জাতের ফসল চাষ হয়। এবছর আমি ৬ একর জমিতে আলু লাগিয়েছি। বর্তমানে আলুর বাজারও ভালো শুনেছি। তবে চরের চাষে সেচের বিষয়ে ব্যয় সমতল জমির চেয়ে তিনগুন বেড়ে যায়। আলুর ফলন ভালো হলেও লাভবান হওয়া নিয়ে শঙ্কিত।
একই চরের কৃষক শফিক উদ্দিন (৫৫) এবছর প্রায় ৮ বিঘা বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন জানিয়ে বলেন, তিস্তা নদীতে তেমন পানি প্রবাহ নেই তাই তাদেরকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ‘তিস্তার বুকে মাত্র ৩৩-৩৫ ফিট পাইপ বসালে তারা পানি পাচ্ছেন। অনেকটা দূরে একটি চ্যানেলে তিস্তার পানির কিছুটা প্রবাহ থাকলেও সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করা তাদের জন্য কষ্টকর। ফলে ‘ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনই সেচে কাজের ভরসা। ফলে ফসল উৎপাদনে খরচ তুলনামূলক বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লালমনিরহাটের অতিরিক্ত উপ- পরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীর বিশাল চরাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার কৃষক বালুচরে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। আলু, ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন করে চরের কৃষকরা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। সেচের জন্য ব্যয় কিছুটা বেশি বাড়লেও কীটনাশকের ব্যয় চরের চাষাবাদে কম লাগে। তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ থাকলে তারা সেখান থেকে সেচের পানি সরবরাহ করে ফসল উৎপাদনে খরচ কমাতে পারতেন আমরা কৃষি বিভাগ থেকে চর কৃষকদের বালুচরে নানা ফসল উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, উজান থেকে পানি তুলনামূলক কম আসায় তিস্তায় পানি প্রবাহ কমেছে। বিশাল পরিমানে পলি জমে তিস্তার বুক ভরাট হয়ে মূল-ভূখন্ডের সমান হয়ে গেছে তাই বর্ষাকালে অল্প পানিতে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ‘তিস্তায় যেটুকু পানি প্রবাহ আছে সেটিও ৫-৬টি চ্যানেলে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। তিস্তা নদী খনন করে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে রুপান্তর করতে পারলে তিস্তায় পানি প্রবাহ সচল থাকবে। এতে লাভবান হবেন চরের কৃষকরা আর রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক পরিবেশও।