শিশু-কিশোরদের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির কারিগর

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:৪২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১

ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির চেয়ে সহজ ও আনন্দদায়ক। শিশুদের মনন ও মেধা বিকাশে কার্যকর ও ফলপ্রসূ একটি পদ্ধতি হলো ডিজিটাল শিক্ষা। বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় হচ্ছে শিশুদের ভবিষ্যৎ ভিত তৈরির সূতিকাগার। এই ভিত-যদি শক্ত হয়, তাহলে এই শিশুরাই দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত হবে। এই শিশু-কিশোরদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে বাংলায় ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে নিরলস ভাবে কাজ করছে-দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ‘বিজয় ডিজিটাল’।

প্রতিষ্ঠানটির সিইও জেসমিন জুঁই। তিনি বলছিলেন, শিশুকাল হচ্ছে তাদের আগামী দিনের জন্য সুযোগ্য করে গড়ে তোলার উৎকৃষ্ট সময়। তারা কাদামাটির মতো, তাদের যেভাবে গড়তে চান সেভাবেই তারা গড়ে উঠবে। শিশুদের তৈরি করার জন্য এ সময়ের শিক্ষার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বর্ণমালা থেকে শুরু করে পরবর্তী ধাপে যে শিক্ষা, সে শিক্ষার ভিত যদি মজবুত হয় তাহলে শিক্ষার্থীর পরবর্তী জীবন স্বচ্ছ হয়। সম্প্রতি বিজয় বিজয় ডিজিটালের কার্যালয়ে সারাদিন ডট নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে-এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন তিনি।

এসময় তিনি শিশু-কিশোরদের জনপ্রিয় শিক্ষা সিরিজ, ব্যক্তিগত জীবন, ডিজিটাল শিক্ষার অগ্রগতিসহ কিভাবে এই কর্মযজ্ঞ শেষ হয় সে সম্পর্কে কথা বলছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছে সিনিয়র প্রতিবেদক শাহজালাল রোহান;

সারাদিন ডট নিউজ: আপনার সম্পর্কে জানতে চাই:

জেসমিন জুঁই: আমি লেখাপড়া করেছি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে। বাড়ি শরিয়তপুরে। এখানে আসার আগেই শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলাম। কম্পিউটার সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার-স্যারের হাত ধরে প্রযুক্তির এই ভুবনে পা রেখেছি। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শিশুদের -এই ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির কাজে সম্পৃক্ত আছি। স্যারের স্বপ্ন-শিশুদের লেখাপড়া যেন আনন্দের হয়; শিক্ষা যেন বোঝা হয়ে ঘাড়ে চেপে না বসে; এই একটি লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনচেতা-গাছ-ফুল-তথা প্রকৃতি প্রেমী। শিশুরা যেহেতু ফুলের মতো; আমার প্রিয় ফুল।

সারাদিন ডট নিউজ: দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির জন্য অনেকদিন থেকেই কাজ করছে-বিজয় ডিজিটাল। এ সম্পর্কে জানতে চাই। শুরু কিভাবে-এখন কোন পর্যায়ে রয়েছেন?

Nagad

জেসমিন জুঁই: বাংলাদেশের শিশুরা বই-খাতা ছাড়া স্কুলে যাবে। আনন্দে পড়াশোনা করবে। সেই ১৯৮৭ সাল থেকে আমাদের স্যার (মোস্তাফা জব্বার) এই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে আসছেন। আসলে শিক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে প্রাথমিক স্তর। বর্ণমালা থেকে শুরু করে পরবর্তী ধাপে যে শিক্ষা সেটা যদি শিক্ষার্থীর মজবুত হয় তাহলে তার পরবর্তী জীবন উজ্জ্বল হয়। এই উদ্দেশ্য নিয়েই বিজয় ডিজিটালের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এক যুগ পার হয়েছে। আমরা হাটি হাটি পা পা করে চলছি; দ্রুত এগোই না কারণ বিষয়টি এমন শিশুদের কাছে কোন প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে যেতে চাই না। কারণ শিশু মাত্রই জিজ্ঞাসু এবং মেধাবী। সবকিছুই তারা জানতে-বুঝতে চেষ্টা করে। তাই তাদের উত্তরগুলো যাতে এই কন্টেন্টের মধ্যে থাকে; তার সব ধরনের চেষ্টা করি। টুডি-অ্যানিমেশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য করে শিশুদের সামনে কনটেন্ট উপস্থাপন করা হয়। এখনো অনেক দূর এগোতে পারি নি। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত কাজ আমরা শেষ করেছি। এর সাথে প্রি-স্কুল আছে । কেজি, নার্সারি এবং প্লে-গ্রুপ। এরপর- এনসিটিবির আরেকটি বই আছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। এটা সহ এই বছর আমাদের বিজয় ডিজিটাল কনটেন্ট বা আইকনের সংখ্যা দাঁড়ালো নয়টিতে।

সারাদিন ডট নিউজ: এই যে কর্মযজ্ঞ-এতে প্রতিবন্ধকতা আসলে কি কি?

জেসমিন জুঁই: এগুলো তৈরি করতে আসলে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেগুলো ওভারকাম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। এ রকম যদি বলি, সব সময় একই ধরনের আর্টিস্ট পাওয়া যায় না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ট্রেনিং প্রসেস । একটা ছেলে/মেয়ে ট্রেনিং-এর দুই বছরের মাথায় কাজের আউটপুটের জন্য তৈরি হয়। আমরা আমাদের কাজের সময় বেধে দেই না; মনের আনন্দে কাজ করে সবাই। শিশুরা কোমলমতি। এদের জন্য যারা কনটেন্ট তৈরি করবে; তাদের মন মেজাজ খারাপ থাকলে আউটপুট আসে না। আমাদের মোস্তাফা জব্বার স্যার খুব আন্তরিক। করোনাকালে সবাই বাড়িতে বসেই কাজ করেছে।

ছবি: সারাদিন ডট নিউজ

সারাদিন ডট নিউজ: আপনাদের সফটওয়্যারগুলোতে কী কী কনটেন্ট থাকে?

জেসমিন জুঁই: আমাদের সফটওয়্যারগুলো পুরোপুরি তৈরি করা হয় টুডি এনিমেশন দিয়ে। বাচ্চারা কার্টুন ভালোবাসে। এখান থেকে খুব সহজে তারা শিক্ষাকে গ্রহণ করতে পারে। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিজয় ডিজিটালের সাথে কাজ করে। প্রথমে বিজয় ডিজিটাল প্রি-স্কুল সেকশন নিয়েই চালু হয়েছিল। আমাদের নিজস্ব ডিজাইনে কনটেন্ট গুলো তৈরি হয়েছিল। প্লে গ্রুপ, নার্সারি এবং কেজি ‌। বিজয় শিশু শিক্ষা, শিশু শিক্ষা ১ ও শিশু শিক্ষা ২। এই নামেই প্রথমে সফটওয়ারগুলো বাজারে ছাড়া হয়েছিল। এরপরে এনসিটিবির কনটেন্ট প্রথম শ্রেণি নিয়ে কাজ শুরু করি। এনসিটিবির বইগুলো ধরেই কাজ শুরু করা হয়। শিশুদের এই বইয়ে যা আছে হুবহু আমার এখানে তুলে ধরি কোন কিছুই পরিবর্তন করা হয় না এমন কি একটা ডটেরও পরিবর্তন হয় না। বই কথা বলে না। সুতরাং বইয়ের বিষয়গুলিকেই গ্রহণযোগ্য করে শিশু-বান্ধব করে টুডি এনিমেশন মাল্টিমিডিয়া আকারে তাদের সামনে উপস্থাপন করি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ছড়া বা কবিতার সাথে কিছু সুর। বিজয় ডিজিটালের তৈরি সুর যোগ করে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো; শিশুরা তার বইয়ের পড়াকে চোখের সামনে মনিটরে কার্টুন আকারে দেখে বলে; এক দুইবার দেখলেই তার পড়াটা শেখা হয়ে যায়, তাকে মুখস্থ করাতে হয় না। নিজে নিজেই ট্যাব ওপেন করে খেলতে খেলতে শিখে যায়। এটাই আমাদের বড় সার্থকতা।

সারাদিন ডট নিউজ: বলছিলেন এক যুগ পার করেছেন এই একযুগে আসলে কতটা সফল হয়েছে-বিজয় ডিজিটাল?

জেসমিন জুঁই: বিজয় ডিজিটালের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফা জব্বার। তাঁর মূল পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি একটি শক্ত হাত খুঁজছিলেন। এরপর কাকতালীয়ভাবে আমি যুক্ত হই। কাজ শুরু করার পরে; ২০১৭ সালে যখন আমার দ্বিতীয় শ্রেণীর আইকন (কনটেন্ট) রিলিজ করি। তখনই অভূতপূর্ব সাড়া পাই। নেত্রকোনার এক স্কুলের শিশুরা তো আমাদের সবাইকে অবাক করে দেয়; সে স্কুলের শিশরা সারা বছরের সিলেবাস দুই মাসেই শেষ করে দেয়। আসলেই অসম্ভব মেধাবী আমাদের শিশুরা। অনেক সময় আমরা ওদের সাথে পেরে উঠিনা। তারা ট্যাবে এই পদ্ধতিতে লেখাপড়া করতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এরকম অনেক উদাহরণ আছে। নেত্রকোণার স্কুলটার শিশুরাই অভিযোগ জানিয়েছে স্যারের কাছে–এক বছরের বইয়ের পড়া দুই মাসে শেষ; বাকি ১০ মাস কি করব’-এটাই বিজয় ডিজিটালের সফলতা। এরকম ট্যাবে লেখাপড়ায় বাচ্চারা যে কতো দক্ষ- না দেখলে বিশ্বাস হবে না।

সারাদিন ডট নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

জেসমিন জুঁই: মোস্তফা জব্বার স্যারের ইচ্ছা ছিল প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত সব শেষ করা হোক। কিন্তু কাজ এখন আরও বড় পরিসরে করতে হচ্ছে কারণ পঞ্চম পর্যন্ত যদি আমরা ডিজিটাল শিক্ষা প্রদান করি, এরপর ষষ্ঠ শ্রেণিতে কি আবার সেই বইয়ের বোঝা ঘাড়ে তুলে দিতে পারি? শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত মাউসে পড়ানো হলো। ক্লাস সিক্সে উঠে কি আবার ফিরে যেতে পারবে শিশু বইখাতায়? এ বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি ক্লাস ফাইভ রিলিজ করেছি। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকেই আমাদের ওয়েবসাইটে এনসিটিবি সংশোধিত কনটেন্ট পাচ্ছে শিশুরা।

সারাদিন ডট নিউজ: কাজের মানে কি ছাড় দেন?

জেসমিন জুঁই: আমরা কখনই আপোস করি নি। আমাদের কাজের পরিকল্পনা এবং মানই এমন যে একটি বই ও আমাদের কনটেন্ট পাশাপাশি থাকলে শিশু যেন বইটাকে সরিয়ে রেখে এই কনটেন্টকে আঁকড়ে ধরে। কারণ ভবিষ্যৎ পৃথিবী এরকমই। এরকম পরিকল্পনা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এতে মানের কোনও ছাড় দেওয়া হয় না। শিশুরা আনন্দে শেখে। মূল্যায়ন পদ্ধতি-সহ সব কিছুই সুন্দর ভাবে সাজানো হয়। সুন্দর ডিজিটাল সাউন্ড যুক্ত হওয়ায় শিশুরা আনন্দ পায় লেখাপড়ায়। আমরা বলতে পারি; বিজয় শিশুশিক্ষার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, কোয়ালিটি। কিছুতেই কোয়ালিটির সঙ্গে আপোস করিনি। কারণ, স্বপ্নের সঙ্গে কখনও ব্যবসা চলে না। ছড়া, কবিতাগুলোতে আমরা সুর বসিয়েছি। যেন শিশুরা একবার-দুবার শুনেই মনে রাখতে পারে। আর শুধু যদি শিশুকে মাউসটা চালিয়ে দেওয়া শেখানো যায়,তাহলে অভিভাবককে আর কিছু করতে হবে না।

সারাদিন ডট নিউজ: কনটেন্ট তৈরির পেছনের গল্প জানতে চাই?

জেসমিন জুঁই: এই কাজের পিছনে রয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। একটি আইকন বের করতে বছর লেগে যায়। যেখানে ১২বছরে আমরা এ পর্যন্ত মাত্র ৯টি আইকন তৈরি করেছি। একটা কাজ শেষ হলে আবার সংশোধনীর জন্য সময় দেই। আমরা এনসিটিবির-বইয়ে কোথাও কোনও কমাও পরিবর্তন করিনা। এই কনটেন্ট তৈরিতে প্রথমে স্ক্রিপ্ট লেখা, তারপর একটি স্টোরি বোর্ড তৈরি করা হয়। এই বোর্ডে কিছু খসড়া ড্রইং হয়। স্টোরি বোর্ড ও স্ক্রিপ্ট নিয়ে অ্যানিমেটরের কাছে যাওয়া হয়। এরপরে ধারণ করা ভয়েসের কাজ চলতে থাকে। ভয়েসের সঙ্গে মিলিয়ে ক্যারেক্টার লিপ সিং করিয়ে সিঙ্ক্রোনাইজ করে কম্পোজে যায়। সবকিছু জোড়া লাগিয়ে একটি কমপ্লিট স্টোরি তৈরি হয়। এরপর প্রোগ্রামিং। কাজ চলে যায় প্রোগ্রামারের কাছে । প্রোগ্রামার বইয়ের সূচির সাথে মিলিয়ে গল্প/কবিতা/ছড়া/অনুশীলনীর লিঙ্ক তৈরি করেন। সবশেষে তৈরি হয় ইন্সটলার। সব মিলিয়ে এই কর্মযজ্ঞ শেষ হয়।

বিজয় ডিজিটাল-কার্যালয়ে : ছবি: শাহজালাল রোহান

সারাদিন ডট নিউজ: দীর্ঘ ১২ বছর যাবত আছেন-এই ডিজিটাল শিক্ষায়? এর পেছনেও অনেক কথা লুকিয়ে আছেন?

জেসমিন জুঁই: বিজয় ডিজিটালের সাথে আজকে ১২ বছর কাজ করছি। এতগুলো বছর একসাথে কনটেন্ট নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। এই কাজের পেছনে সবচেয়ে বড় ত্যাগ হচ্ছে বর্তমানে মন্ত্রী- বিজয় ডিজিটালের কর্ণধার মোস্তফা জব্বার স্যারের । এই কর্মযজ্ঞ চালানোর জন্য জমি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন মন্ত্রী। সততার সঙ্গে জীবন যাপন করে স্বপ্নের অংশ তাঁর এই ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি। শিশুদের কাছ থেকে বইয়ের বোঝা নামানোর জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্য নিয়েই অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আজকে ‘বিজয় ডিজিটাল’। এই প্রতিষ্ঠানের মূল পরিকল্পনা মোস্তফা জব্বার স্যারের।

সারাদিন ডট নিউজ: কীভাবে অভিভাবকগণ তাদের বাচ্চাদের বিজয় ডিজিটালের সাথে যুক্ত করতে পারেন?

জেসমিন জুঁই: করোনার এই সময়ে আমরা খুব দ্রুত সবার কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। গত এক বছর আমাদের সব কনটেন্ট ফ্রি ছিল। আমাদের http://www.bijoyekushe.net.bd/ এই ওয়েবসাইটে শিক্ষামূলক সফটওয়্যার গুলো আছে। এখানে গতবছর সব কনটেন্ট বিনামূল্যে ছিল। ঘরে বসে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যেন ব্যত্যয় না ঘটে তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সবাই ঘরে বসেই যেন বাবা-মার সাথে পড়াশোনা করতে পারে সে জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ডিভাইসগুলো আমাদের মার্কেটিং টিম ছিল তারা পৌঁছে দিয়েছে। নতুন বছরের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্কুল খুললে হয়তো একরকম প্লান হবে; না খুললে হয়তো অন্যরকম হবে। তবে পহেলা ফেব্রুয়ারি আমাদের নতুন কনটেন্ট আমরা উন্মোচন করে দিব; সব শিশুদের জন্য।

সারাদিন ডট নিউজ: ডিজিটাল শিক্ষায় কেমন সাড়া পাচ্ছে ‘বিজয় ডিজিটাল’?

জেসমিন জুঁই: এটা আসলে কাউন্টেবল নয় কারণ শুধু আপনাকে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের প্রতিটি বর্গমাইল এলাকায় এখন বিজয় ডিজিটাল বিস্তৃত। বিজয় ডিজিটাল-কি এখন সবাই জানে। আনন্দের সাথে শিশুর শিক্ষা উপকরণ তৈরি হয় ‘বিজয় ডিজিটালে’। এছাড়া আমাদের ওয়েবসাইটে গেলে ডাউনলোড লিংক দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে কতটা জনপ্রিয় হয়েছে বিজয় ডিজিটাল। সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয় শিশু শিক্ষা প্লে নার্সারি এবং কেজি স্কুল। এগুলো আরও বাড়বে যখন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি আরও ভালো হবে। তবে মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, বর্তমান সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার।

বিজয় ডিজিটাল -এর ওয়েব সাইট থেকে নেওয়া।

সারাদিন ডট নিউজ: ডিজিটাল বাংলাদেশ শিশু শিক্ষায় কতদূর এগিয়েছেন বলে মনে করেন?

জেসমিন জুঁই: বিজয় ডিজিটাল- কোয়ালিটি মেইনটেইন করে, কোয়ান্টিটি নয়। কোয়ালিটির কারণেই এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আমি শুধু আপনাকে এটুকু বলতে পারি, একবার বিজয় ডিজিটাল কনটেন্ট যে শিশু ব্যবহার করেছে সে কখনোই এর আবহ থেকে বের হতে পারবে না। এক কথায় বলা চলে, মুশকিল। এজন্য আমরা কাউকে বাধ্য করি না। যার জন্য আমি কনটেন্ট তৈরি করছি; তার কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে কেন সে এই শিক্ষা নিবে না।

সারাদিন ডট নিউজ: ই-এডুকেশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগে- ২০২০ ভার্চুয়াল উইটসা গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন “বিজয় ডিজিটাল”-এই সম্মাননাকে কিভাবে দেখছেন।

জেসমিন জুঁই: আমি কাজ করেছি সেজন্য ‘সম্মানন ’ পেয়েছি বিষয়টা এমন না। সম্মাননা দেওয়া হয় যাকে-তার দায়িত্বশীলতা আরও বেড়ে যায়। কাজ আরও নিখুঁত করে করতে হবে এই কাজে কোন রকম ফাঁকফোকর থাকা চলবে না। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান উইটসা- এই সংগঠনের সদস্য। যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এ বছর নয়টি ক্যাটাগরিতে অ্যাপ্লাই করেছিলো। তার মানে এতবড় সম্মাননা কিন্তু যোগ্যতার ভিত্তিতেই দেওয়া হয়েছে। এখানে বিজয় ডিজিটাল কিন্তু রানারআপ হয়েছে ইন্টেলের সাথে প্রতিযোগিতায়। এই গ্রুপে ইন্টেল ফাস্ট চ্যাম্পিয়ন, রানার আপ হয়েছে বিজয় ডিজিটাল। বিশ্বের ১৭টি দেশের ১৭টি কনটেন্টের সাথে যুদ্ধ করে রানারআপ হয়েছি। তাদের হারিয়েই কিন্তু আমি সেকেন্ড। করোনাকালীন সময়ে শিশুদের কাছে বিনামূল্যে শিক্ষা পৌঁছে গেছে। এ জন্যেই আমরা এই পুরস্কার পেয়েছি। এরকম স্বীকৃতি পেলে কাজের উপর এবং দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ আরও বেড়ে যায়।

সারাদিন ডট নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

জেসমিন জুঁই: কাজ যখন শুরু করি তখন কেবল প্রাথমিকের পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিশুদের জন্য আমরা কি করবো ভাবছি কারণ মাউসের শিক্ষা দিয়ে তো আবার তাকে বইয়ের দুনিয়ায় নিয়ে যেতে পারি না। ভবিষ্যতেও হয়তো আমাদের কনটেন্ট চালিয়ে যাব। যতদিন পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা বই আকারে ঘাড়ে চেপে বসে আছে, ততদিন পর্যন্ত বোধ হয় এই কনটেন্ট তৈরির কাজ আমরা চালিয়ে যাবো। আমি ও আমরা চাই শিশুর কাছে ছোট্ট একটি ট্যাবলেট পিসি ছাড়া লেখাপড়ার জন্য আর কিছুই না থাকুক। শিশুরা খোলা মাঠে দৌড়াবে বৃষ্টিতে ভিজবে কাদামাটি গায়ে লাগবে। এটাই আমরা চাই। আপনাদের এটুকু বলতে পারি, ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা বিল্ডিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। যে যেখানে থাকুক না কেন-ক্লাসের সময় হবে, শ্রেণীতে যোগ দিবে বা কানেক্টেড হবে। কেউ হয়তো ড্রইংরুমে বসে যুক্ত হবে। এটাই হবে ভবিষ্যতের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্যার তা-ই বলে আসছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে ছোট্ট একটা চিপের মধ্যে। সময়মতো টিচার্স স্টুডেন্ট সবাই এক হবে। এটি যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে বিজয় ডিজিটাল দায়িত্ব অনেক। পাশাপাশি সরকারেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে।

 

সারাদিন/১ ফেব্রুয়ারি/এসআর/এইচ